‘শিগগিরই শুরু হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কাজ’

বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। এই সপ্তাহের মধ্যেই রামপাল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী ‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের’ (বিআইএফপিসিএল) পক্ষ থেকে কাজ শুরুর পদক্ষেপ হিসেবে এনটিপি (নোটিশ টু প্রসিড) দেওয়া হবে। এরপর দ্রুতই মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে মেইন প্লান্ট স্থাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন বিআইএফপিসিএল এর ম্যানেজার ( জনসংযোগ) মো. আনোয়ারুল আজিম।খবর  বাংলা ট্রিবিউনের।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় ১০ এপ্রিল ভারতের এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট (এক্সিম) ব্যাংকের সঙ্গে ১৬০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থসংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। একই সময় পক্ষগুলোর মধ্যে চুক্তিপত্র বিনিময় হওয়ায় এই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করতে আর কোনও অসুবিধা নেই।’

অপর দিকে, রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে আগামী ২০ এপ্রিল খুলনার হাদিস পার্কে উপকূলীয় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘বিশেষজ্ঞসহ দেশের সব পর্যায়ের মানুষ এবং ইউনেসকোসহ দায়িত্বশীল আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ভারত ও বাংলাদেশের কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করতে সরকার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার এবার সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিও করেছে। যৌথ প্রকল্প বলা হলেও এই ঋণের পুরো দায়ভার বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে ‘সার্বভৌম গ্যারান্টি’ দিয়ে। এই ঋণের টাকায় যেই ভারতীয় কোম্পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে তাকেও সবরকম শুল্ক ও দায় থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের এই ভূমিকায় ধিক্কার জানাই। বাংলাদেশের মানুষ এই দেশের প্রধান প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুন্দরবন ও নদী বিনাশ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমরা এই ঋণচুক্তির প্রতিবাদে আগামী ২০ এপ্রিল খুলনায় সুন্দরবন উপকূলীয় মানুষের মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছি। সরকার আমাদের দাবি না মানলে অবস্থান, ঘেরাওসহ আরও কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) খুলনা অঞ্চলের সদস্য এমএ সবুর রানা বলেন, ‘আমরা এখনও বিশ্বাস করি সরকার এই গণবিধ্বংসী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ থেকে ফিরে আসবে। আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই।’

রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ধ্বংস করে দেবে উল্লেখ করে এর বিরোধিতা করছেন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তবে এই বিরোধিতা উপেক্ষা করেই সরকার প্রকল্পটির বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। এরই ধারাবহিকতায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড রাসকিনহা এবং বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য পরস্পরের মধ্যে চুক্তিপত্র বিনিময় করেন। সেই অনুষ্ঠানে ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিআইআইয়ের চেয়ারম্যান আদি গোদরেজ, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-সচিব ও বিআইএফপিসিএলের চেয়ারম্যান আহমেদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাট জেলার রামপাল এলাকায় ৭৪২ হেক্টর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ প্রকল্প-‘মৈত্রি সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র’। এটা পরিচালনা করবে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি। এখানে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি চালু হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। পরে এই সময় ২০২১ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে যায়।

এতে ব্যয় হবে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রামপাল কেন্দ্রের ৭০ শতাংশ অর্থ ঋণ নেওয়া হবে। এই ঋণ দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৩০ শতাংশ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে।

প্রকল্প গ্রহণের যুক্তি হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার এবং ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট থেকে ৬৯ কিলোমিটার দূরে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিবেশবান্ধব।



মন্তব্য চালু নেই