শিক্ষিত বেকার নিয়ে চরম সঙ্কটে মোদী সরকার
বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারত। সীমান্ত সমস্যা দেশটির নিত্যসঙ্গী। এছাড়াও বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যাটা মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এতোসব সমস্যার সঙ্গে যোগ হলো শিক্ষিত বেকারের ভবাবহ সমস্যা।
এমনিতেই ভারতে বেকারের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধির হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারি যে কোনো চাকরিতে একটি পদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ছে শতাধিক। শুধু এখানেই থেমে নেই নিম্নপদের চাকরির জন্য আবেদন করছেন অনেক বেশি উচ্চ শিক্ষিতরা।
সরকারি হিসাবে, গেল এক বছরে ভারতে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে এক কোটির মতো। অথচ কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র এক লাখ লোকের। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকারের সাড়ে ২৪ হাজার শূন্যপদের জন্য আবেদন জমা পড়েছিল প্রায় দেড় কোটি। চলতি অর্থ-বছরে পদের সংখ্যা ২৫ হাজার বাড়লেও এর বিপরীতে আবেদন ছাড়িয়ে গেছে আড়াই কোটি।
চলতি অর্থ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রুপ ‘সি’ ও ‘ডি’ এর ২৫ হাজার পদে চাকরির জন্য পদে ৮টি আলাদা পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেবে স্টাফ সিলেকশন কমিশন। কমিশনের হিসাবে, ওই ২৫ হাজার পদে এ পর্যন্ত জমা পড়েছে ২ কোটি ১৭ লাখ আবেদন। এভাবে আবেদন জমা হতে থাকলে বছরের শেষ নাগাদ তা আড়াই কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
চাকরি বাজারের এমন পরিস্থিতিতে চিন্তা বেড়েছে মোদি সরকারের। এক বছরের মধ্যেই একই সংখ্যক পদের জন্য প্রায় এক কোটি প্রার্থী বেড়ে যাওয়ায় এটা স্পষ্ট, বেসরকারি খাতে যথেষ্ট চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বেসরকারি খাতে চাকরির সুযোগ না হলে সরকারি চাকরিই হবে একমাত্র ভরসা। তখন চাকরি পেতে মানুষ দুর্নীতির আশ্রয় নেবে। এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে মোদি সরকারকে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে আর্থিক প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এর মানে বেসরকারি খাত কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না।
বিষয়টি নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলো মোদি সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে বছরে এক কোটি ব্যক্তির কর্মসংস্থান করা হবে। বর্তমানের এই সমস্যা নিয়ে দেশটির মোদি বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, এক কোটি দূরে থাক। ২০১৬ সালে মাত্র দেড় লাখ চাকরি হয়েছে। এটা শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাব।
তবে ক্ষমতাসীন মোদির দল বিজেপি বলছে, সমস্যার মূলে মনমোহন জমানা। তখন আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়লেও চাকরি হয়নি। ২০০৮-০৯-এ এসএসসির মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার চাকরি হয়েছিল। আবেদন এসেছিল ১০ লাখের বেশি। ১০ বছরেই আবেদনকারীর সংখ্যা ২০ গুণ বেড়েছে। আর এখন প্রতি মাসে নতুন ১০ লাখ বেকার চাকরি খুঁজতে উঠে-পড়ে লেগেছেন।
তবে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়র দাবি, সরকার ২০২০ সালের মধ্যে ৫ কোটি চাকরির ব্যবস্থা করবে। এমন প্রতিশ্রুতি এখন আর কতটা ভরসাযোগ্য, আবেদনকারীর সংখ্যা থেকেই তা বেশ স্পষ্ট।
মন্তব্য চালু নেই