শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ
সুন্দর করে লিখতে পারা একটি আর্ট , একটি শিল্প । প্রত্যেক পরীক্ষার্থীই চায় তার পরীক্ষা ভাল হোক । সে যেন পূর্ণ নম্বর পেয়ে কাঙ্খিত ফলাফল করতে পারে সে চেষ্টাই করে। পরীক্ষার পূর্ব প্র¯তুতি কেমন তার কাছে সেটা মূখ্য নয়। বরং নম্বর বেশী পাওয়া যাবে কীভাবে সেটা নিয়ে খুব বেশী ভাবতে থাকে। বিশেষ করে লিখিত পরীক্ষার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী সতর্কতা অবলম্বন করে। কলম যেহেতু মনের কথা বলে, তাই কলম দিয়ে উত্তর পত্র সাজাতে চেষ্টা করে। লেখার মধ্যে কারো অবয়ব কিংবা গঠন বুঝা যায়না । কিন্তু লেখাটি যদি সুন্দর হয় তাহলে সে লেখার মধ্যেই একজন ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা , মানসিকতা ,দক্ষতা বুঝা যায়। সে জন্য লেখা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারলে পরীক্ষক ঐ শিক্ষার্থী সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখেন। পরীক্ষক খুব সহজেই বুঝতে পারেন শিক্ষার্থীর মান কেমন। সঠিক উত্তর ও হাতের সুন্দর লেখা হলেই ধরে নেয়া হয় এটি মেধাবী শিক্ষার্থীর উত্তর পত্র। লেখা সুন্দর হলেই যে নম্বর বেশী পাবে তা চিন্তা করা ভুল। লেখা যত সুন্দরই হোক সঠিক উত্তর না লিখলে কোন লাভ হবেনা। পরীক্ষার উত্তর পত্র কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে কয়েকটি পরামর্শ দেয়া হলো :
* পরীক্ষার্থীগণ নিজ নিজ উত্তর পত্রের ও.এম.আর অংশে সন, পরীক্ষার নাম, রোল নম্বর, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড সহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি যথাযথ ভাবে লিখে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। তথ্য ভুল হলে ফলাফল স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কালো কালীর বলপেন ব্যবহার করা আবশ্যক।
* কোন অবস্থাতেই উত্তর পত্র ভাঁজ করা যাবেনা।
* উত্তর পত্র হাতে পাওয়ার পূর্বেই সম্পূর্ণ খাতায় মার্জিন করবে। বাম দিকে সোয়া ১, উপরে সোয়া ১, ডানে ও নীচে ০.৫ ইঞ্চি করে জায়গা বাদ রেখে মার্জিন করা ভাল। চারদিকে সম্ভব না হলে অন্তত বামে ও উপরে মার্জিন করবে। খাতায় মার্জিন করা ভাল শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য।
* যেই প্রশ্নের উত্তর ভাল ভাবে জানা আছে সেটির উত্তর প্রথমে করতে হবে।
* কভার পৃষ্ঠা ও শেষ ব্যতীত গোটা খাতার উভয় পৃষ্ঠায় উত্তর লিখতে হবে।
* পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর জন্য লাল কালির ব্যবহার নিষিদ্ধ। উজ্জল রঙিন কালির ব্যবহার না করা উত্তম। কালো কালির কলম ব্যবহারই সঠিক। এ ছাড়া সাইন পেন বা টপস্টার কালার পেন দিয়ে প্রশ্ন নং বা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাইলাইটস করা যেতে পারে।
* প্রশ্নের চাহিদানুযায়ী উত্তর করা প্রয়োজন। নিজের ইচ্ছামতো জোড় করে লেখা কম বা বেশী করা ঠিক নয়। প্রশ্নের মান লক্ষণীয়।
* বানান ও ব্যাকরণগত ভুল পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে বিরাম ও যতি চিহ্নের সঠিক ব্যবহার করা। এর সঠিক ব্যবহার না হলে অর্থের পরিবর্তন ঘটতে পারে। খাতার উপর দিকে মার্জিনের ডান পাশে পৃষ্ঠা নং ০১, পৃষ্ঠা নং ০২ এ ভাবে লেখা উত্তম। অতিরিক্ত উত্তরপত্র গ্রহণ করলে তাতেও পৃষ্ঠা নম্বর বসানোর চেষ্টা করা।
* একই প্রশ্নের উত্তরে যদি বিভিন্ন অংশ থাকে এবং কোন অংশ যদি লিখতে ভুল হয় বা ছুটে যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের প্রাথমিক অংশের নীচে “বাকী অংশ অমুক পৃষ্ঠায়” এভাবে লিখে দেয়া প্রয়োজন। এতে পরীক্ষকের জন্য নম্বর প্রদান সহজ হয়। সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
* কোন শব্দ,বাক্য বা অনুচ্ছেদ ভুল হলে ওভার রাইটিং ,ঘষামাজা, কাটা কাটি না করে এক টানে কেটে সঠিক কথাটি লিখবে। ওভার রাইটিং এর ফলে শিক্ষার্থীর প্রতি নেতিবাচক ধারণা জন্মে। এবং কম নম্বর দেয়ার মানসিকতা তৈরী হতে পারে।
* পরীক্ষায় পাস করার জন্য অনুরোধ কিংবা কোন অসৌজন্যমূলক কথা লেখা দূষণীয়। এবং কভার পৃষ্ঠা ব্যতীত উত্তর পত্রের কোথাও নাম, রোল, অধ্যয়নরত প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা,টেলিফোন নম্বর,মোবাইল নম্বর,বাসা নম্বর, বা যোগাযোগের কোন মাধ্যমের উল্লেখ করলে উত্তরপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।
* উত্তরপত্রের সকল লেখা একই রকম করে লেখা। অর্থাৎ প্রথম দিকের উত্তর গুলোতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে উত্তর লেখা, সুন্দর করা এবং শেষের উত্তর গুলোতে সময় কম থাকার অযুহাতে খুব দ্রুত ও অসুন্দর করে লেখা মোটেই ঠিক নয়। এভাবে লিখলে নম্বর কম আসে।
* প্রতিটি পৃষ্ঠায় ১৫-২০ লাইন করে এবং প্রতিটি শব্দের মাঝে ২/৩ বর্ণ সমপরিমাণ ফাঁকা রাখা।
* দুই লাইনের মাঝখানে ০.৫ ইঞ্চি করে এবং এক অনুচ্ছেদ থেকে আরেক অনুচ্ছেদ মাঝখানে কমপক্ষে ১ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা রাখা দরকার।
* বোর্ড পরীক্ষায় অতিরিক্ত উত্তরপত্র গ্রহণ করলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রতিটি অতিরিক্ত খাতার উপরের দিকে যদি একটি সিরিয়েল নম্বর থাকে , তাহলে সে নম্বরটি মূল উত্তরপত্রের কভার পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীর অংশে নির্দিষ্ট স্থানে নম্বরটি লিখে সঠিক বৃত্তটি ভরাট করতে হবে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শেষ হওয়ার ০৫/১০ মি. পূর্বে অতিরিক্ত খাতা সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়, তাই অতিরিক্ত খাতার প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে।
* উত্তর পত্রের কোন পৃষ্ঠার দুই তৃতীয়াংশ পর্যন্ত লেখা হলে তার নীচে নতুন কোন প্রশ্ন শুরু না করে পরবর্তী পৃষ্ঠায় শুরু করা ভাল।
* ভুল বশত খাতার মাঝে ফাঁকা থেকে গেলে তা উপর নীচে লম্বা দাগ( / ) দিয়ে কেটে দিতে হবে।
* পরীক্ষা শেষ হলে সম্পূর্ণ উত্তরপত্র পড়ার দরকার , কেননা লেখার মধ্যে কোন ভুল থেকে যেতে পারে। বিশেষ করে প্রশ্ন নং লেখা হয়েছে কিনা তা নজর করা।
* লেখার মধ্যে যদি চিত্রাঙ্কন,চার্ট,ছক ইত্যাদির প্রয়োজন হয় তা নির্ভুল ও আকর্ষণীয় করে তোলা।
* প্রতিটি উত্তরের জন্য বরাদ্দকৃত সময়ের মধ্যেই লেখা শেষ করতে পারলে পরিপূর্ণ উত্তর করা সম্ভব।
মোট কথা অবান্তর উত্তর না করে প্রশ্নের চাহিদানুযায়ী গঠনমূলক সঠিক উত্তর করা। প্রশ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বৈচিত্র্য ও নতুনত্বই সর্বোৎকৃষ্ট। এ সকল নিয়ম মেনে আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে পারলে আশা করা যায় কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, গজমহল ট্যানারী উচ্চ বিদ্যালয়, হাজারীবাগ, ঢাকা- ১২০৯
মন্তব্য চালু নেই