শিক্ষামন্ত্রীকে দেখিয়ে দিলেন প্রাথমিকের মন্ত্রী
দেশের পাবলিক ও ভর্তি পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কেন্দ্র পরিদর্শন দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে ফলাও করে প্রচারের জন্য দলবল নিয়ে মন্ত্রী ঢুকে যান পরীক্ষার হলে। মন্ত্রীর হল পরিদর্শন সিনেমার শুটিংয়ের মতো ক্যামেরাবন্দি করেন টেলিভিশন চিত্রগ্রাহকরা। ছবির জন্য পত্রিকা, অনলাইনের চিত্রগ্রাহকরাও ছুটেন মন্ত্রীর পেছনে।
সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের পরিদর্শন নিয়ে বেশ সমালোচিত হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তার সঙ্গে থাকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সরব উপস্থিতি। সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতারাও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ থাকেন সেই বহরে। মন্ত্রীর খবর পরিবেশনের জন্য সাংবাদিকরাও ঢুকেন হলে। শিক্ষামন্ত্রীর ২০-৩০ মিনিটের কেন্দ্র পরিদর্শনে ক্ষতির শিকার হয় পরীক্ষার্থীরা। তাদের মনোযোগ হয় বিঘ্নিত।
তবে এবার রেওয়াজের ব্যতিক্রম ঘটালেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলেও তিনি পরীক্ষার হলে ঢুকবেন না। কথাও রেখেছেন তিনি।
রোববার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রথমদিনে কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলেও হলে ঢুকেননি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। সাংবাদিকেরও হলের ভেতরে না যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
রোববার রাজধানীর মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভিকারুন নুন নিসা স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। ভিকারুন নুন নিসা স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে হল থেকে দূরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।
অন্য মন্ত্রীরা হলে ঢুকলেও তিনি হলে গেলেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমানের বলেন, ‘ম্যান টু ম্যান ভেরি করে। আমার কাছে মনে হয়েছে হলের ভেতরে গেলে বাচ্চাদের অসুবিধা হয়। তাই আমি মনে করি না পরীক্ষার্থী, হল পরিদর্শক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাইরে কারও পরীক্ষা হলে থাকার বা যাওয়ার দরকার আছে।’
মন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিবাবকরা। ভিকারুন নিসা নুন স্কুলের অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগম বলেন, ‘এটা একটা ভালো উদ্যোগ। মন্ত্রী, এমপিরা পরীক্ষার হলে গেলে বাচ্চাদের অসুবিধা হয় আমরা বুঝি, কিন্তু তাদের তো তখন বলতে পারি না। এমনিতেই বাচ্চারা পরীক্ষার সময় এক ধরনের আতঙ্কে থাকে। সে সময় কোলাহল হলে তাদের মানসিক চাপ বাড়ে। আমরা আশা করি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর এই দৃষ্টান্ত অন্যরাও অনুসরণ করবেন।’
কয়েকজন অভিবাবক বলেন, আমরা টিভিতে দেখি মন্ত্রীরা পরীক্ষার সময় হলের ভেতরে বাচ্চাদের সঙ্গে কথাও বলেন। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর কথা বললে তাদের মনোযোগ যেমন নষ্ট হয়, তেমনি সময়ও নষ্ট হয়। সেই সময় তো বাচ্চাদের দেয়া হয় না। মন্ত্রীদের যদি হলের ভেতরের পরিস্থিতি দেখতে ইচ্ছে হয় তবে তাদের একাই যাওয়া উচিৎ। এতো মানুষ, ক্যামেরা নিয়ে কেন? প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ভালো কাজ করেছেন।
জেএসসি পরীক্ষার হলে এভাবেই কথা বলছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ
তবে কথা রাখেননি সাংবাদিকদের কেউ কেউ। মন্ত্রীর চলে যাওয়ার পর বেশকিছু বেসরকারি টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের ক্যামেরাম্যানকে ছবির জন্য ভিকারুন নুন নিসা স্কুলের হলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে ভিকারুন নুন নিসা স্কুলের এক শিক্ষিক বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম মন্ত্রীর এই আহ্বানে সাংবাদিকরা সাড়া দেবেন। সাংবাদিকরা মন্ত্রীকে এতোক্ষণ ধন্যবাদ দিলেন। সেই সাংবাদিকরাই পরে হলে ঢুকলেন ক্যামেরা নিয়ে। তাদের নাকি লাইভ (সরাসরি সম্প্রচার) করতে হবে। এই লাইভের প্রতিযোগিতা কি বন্ধ হবে না?’ ওই শিক্ষক অবশ্য নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
রোববার সকাল ১১টা থেকে সারাদেশে একযোগে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষায় এবার পরীক্ষার্থী ৩০ লাখ ৯৪ হাজার ২৬৫ জন। এর মধ্যে প্রাথমিকে ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৪ জন ও ইবতেদায়ীতে ৩ লাখ ৫ হাজার ৭২১ জন।
পরীক্ষা সকাল ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে। তবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় রাখা হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা পরিদর্শনে গেলেও কেন্দ্রে প্রবেশ করেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘এক মিনিটের জন্যও আমি পরীক্ষা হলে প্রবেশ করলে পরীক্ষার্থীদের ডিস্টার্ব হবে। আমার সঙ্গে সাংবাদিকরাও প্রবেশ করবেন। হলে পরীক্ষার্থীদের প্রতিটি সেকেন্ড অনেক মূল্যবান। এজন্য আমি হলে প্রবেশ করিনি।’
মন্তব্য চালু নেই