শাহরুখ ও হৃত্বিকের চেয়ে অক্ষয় কুমারের সাফল্যের নেপথ্যের কারণ!

একটা ছোট্ট হিসেব দিয়ে লেখাটা শুরু করা যাক৷ গত ৩ সন্তাহে দেশে এবং বিদেশে ‘রইস’ এবং ‘কাবিল’ যথাক্রমে রোজগার করেছে ২৭১ কোটি টাকা এবং ১৬৭ কোটি টাকা৷ এটা কোনও বানানো তথ্য নয়, স্বীকৃত বক্স অফিস থেকে পাওয়া তথ্য৷ সেই একই সূত্র জানাচ্ছে প্রথম সন্তাহে দেশে এবং বিদেশে ‘জলি এলএলবি টু’ রোজগার করেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা৷ শুধুমাত্র এই তথ্য থেকে মোটেই প্রমাণিত হয় না অক্ষয়কুমার শাহরুখ খান বা হৃতিক রোশনের তুলনায় বেশি বিক্রিযোগ্য তারকা৷

আরও একটা হিসেব দেওয়া যাক৷ অক্ষয়কুমারের পর পর চারটি ছবির দেশে এবং বিদেশে রোজগার এই রকম: ‘এয়ার লিফট’ (১২৭ কোটি), ‘হাউসফুল ৩’ (১০৮ কোটি), ‘রুস্তম’ (১২৪ কোটি) এবং ‘জলি এলএলবি টু’ (প্রথম সন্তাহে প্রায় ১০০ কোটি)৷ এই তথ্য থেকে অন্তত এটুকু প্রমাণিত হচ্ছে এই মুহূর্তে মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যার ধারাবাহিকতা রয়েছে, তিনি হলেন একমাত্র অক্ষয়কুমার৷

এই ধারাবাহিকতা শাহরুখ খান বা হৃতিক রোশনের অন্তত এই বছরে এখনও পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া ছবিগুলির নেই৷ সালমান খান কিংবা আমির খান বছরে একটা ছবি যেখানে করেন সেখানে অক্ষয়কুমার করেন অন্তত ৩টা৷ সেই হিসেবে বছরে অক্ষয়কুমারের ছবি বিক্রি হয় ৩৬০ কোটি টাকা (২০১৬ সালের হিসেব অনুযায়ী)৷ আমির খানের ‘দঙ্গল’ ছাড়া এর কাছাকাছি আর কেউ নেই৷

এখন প্রশ্ন হল অক্ষয়কুমারের এই ‘মিস্টার কনসিসটেন্ট’ হয়ে ওঠার রহস্যটা কী? ১৯৯১ সালে ‘সৌগন্ধ’ নামের ছবি দিয়ে তার বলিউড কেরিয়ার শুরু৷ এখন ২৫ বছর পর তার ছবির সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে৷ কিন্ত্ত এখন যে ধারাবাহিকতা তিনি দেখাচ্ছেন সেই ধারাবাহিকতা আগে তার মধ্যে দেখা যায়নি৷ কখনও চড়াই, কখনও উতরাই তার কেরিয়ার৷

আমরা যদি কেবলমাত্র শেষ ৪টি ছবির বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব অক্ষয়কুমার সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছেন নিজেকে৷ এই বদলে ফেলাটাই তার সাফল্যের রহস্য৷ যে অভিনেতা তার কেরিয়ারের ২০ বছরের মধ্যে সাতটি ‘খিলাড়ি’ সিরিজের ছবি করেছেন, তিনি কোনও দিন ‘এয়ারলিফ্ট’ কিংবা ‘জলি এলএলবি’র মতো ছবি করবেন, এটা ভাবা যায়নি৷ অ্যাকশন হিরো থেকে তিনি রূপান্তরিত হয়েছেন অভিনেতায়৷ এই ট্রান্সফরমেশনই অক্ষয়কুমারকে কনসিস্টেন্ট করে তুলেছে৷ এই বিবর্তন বা পরিবর্তন একদিনে আসেনি৷

তিনি অ্যাকশন থেকে সরে এসেছেন কমেডি-অ্যাকশনে (হেরাফেরি সিরিজ)৷ যখন এই ঘরানায় তিনি সাফল্য পেয়েছেন তখন সরে এসেছেন সম্পূর্ণ কমেডিতে (হাউসফুল সিরিজ)৷ অর্থাত্, অ্যাকশন মাস্টার থেকে অভিনেতা হওয়ার মাঝের পর্যায়ে তিনি হয়ে উঠলেন কমেডি অভিনেতা৷ এই কমেডি অভিনেতা থেকে তার রূপান্তর হল সিরিয়াস অভিনেতায়৷

‘জলি এলএলবি’ যতই কমেডিতে মোড়া ছবি হয়ে থাকুক না কেন, আদতে ছবিটা দাবি করেছে অভিনেতা অক্ষয়কুমারকে৷ কারণ, অক্ষয়ের সঙ্গে সেই ছবিতে সমানে টক্কর দিয়েছেন সৌরভ শুক্লার মতো দুঁদে কমেডি অভিনেতা৷ ঠিক এই একই জিনিস ঘটেছিল ২০১৩ সালে নীরজ পান্ডে পরিচালিত ‘স্পেশাল ২৬’ ছবিতেও৷ এবং তারপরে, নীরজ পরিচালিত এবং অক্ষয় অভিনীত বেশিরভাগ ছবিতেও৷ বলা যায়, সেখান থেকেই শুরু৷

এই ক্রমশ অভিনেতা হয়ে ওঠার পথটাই অক্ষয়কুমারকে কনসিসটেন্ট করে তুলেছে৷ তিনি এমন ছবি হাতে নিচ্ছেন যেখানে অভিনয় বেশি, পাশে দক্ষ অভিনেতার সংখ্যা বেশি৷ বিগত কয়েক বছরে অক্ষয়কুমারের ছবির তালিকায় চোখ বোলালেই এটা বোঝা যাবে৷ ‘বেবি’ (২০১৫), ‘ব্রাদারস’ (২০১৫), ‘এয়ারলিফ্ট’ (২০১৬), ‘রুস্তম’ (২০১৬) আর এখন ‘জলি এলএলবি’৷ ২০১৭ এর পর আসবে ‘নাম শাবানা’৷ অক্ষয়কুমার মোটে চার বছর সময় নিয়েছেন নিজের ‘খিলাড়ি কুমার’ নামটাকে ফিকে করে দিতে৷

এর পাশাপাশি তিনি কেমন চরিত্র নির্বাচন করছেন সেটাও লক্ষ্য করার মতো৷ ‘এয়ার লিফট’, ‘রুস্তম’ এবং ‘জলি এলএলবি’— এই তিনটি ছবিতেই তিনি বিবাহিত৷ অর্থাত্, রোমান্স কম৷ গান থেকেও নেই৷ অর্থাত্, ‘চুরাকে দিল মেরা গোরিয়া চলি’ গাওয়ার কোনও স্কোপ নেই তার৷ নায়িকা কখনও নিমরত কাউর, কখনও জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ আবার কখনও হুমা কুরেশি৷ এরা কেউই স্টার হিসেবে তেমন বিখ্যাত নন৷ কিন্ত্ত এরা তিনজনেই অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম শ্রেণির৷ যেহেতু এদের স্টার ভ্যালু তেমন নয়, তাই এদের পর্দায় উপস্থিতিও নায়িকাসুলভ নয়৷ এর ফলে অক্ষয়ের বিরুদ্ধে ছবিতে যে নারী চরিত্ররা থাকছে তাদের গুরুত্ব তেমন থাকছে না৷ অতএব, ছবির অধিকাংশ সময়েই পর্দায় থাকছেন তিনিই৷ এই স্ট্র্যাটেজি নেওয়ার ফলেই ছবিতে তার গুরুত্বই প্রধান৷ অতএব, ছবির সাফল্যের দাবিদার তিনি একাই৷

এর পাশাপাশি তিনি চিত্রনাট্যে দেখছেন অভিনয়ের সুযোগ কতটুকু৷ বিগত পাঁচটি ছবিতে দক্ষ অভিনেতাদের পাশে তাকে যেন বেমানান না লাগে সেদিকে তার নজর রয়েছে৷ আর এই কারণেই নিজের পুরানো স্টার ইমেজ ফেলে দিয়ে তিনি হয়ে উঠতে চাইছেন ‘অ্যাক্টর’৷ তরুণ হিরোদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না গিয়ে তিনি অ্যাক্টর হয়ে আলাদা আইডেন্টিটি তৈরি করে ফেলেছেন বলেই তিনি ব্যতিক্রম৷

তিনি এটাও জানেন তিনি আমির খান নন৷ অতএব সিরিয়াস অভিনেতা কতটা হতে পারবেন সেই মাপ তার জানা৷ তিনি আরও জানেন তিনি অন্য খানেদের তুলনায় কমেডিটা ভালো করেন৷ অতএব, কিছুটা কমেডি আর কিছুটা সিরিয়াসনেস মিলিয়ে চরিত্র হলেই তিনি অপরাজেয়৷ আর এটাই তার সাফল্যের চাবিকাঠি৷ ইন্ডিয়া টাইমস



মন্তব্য চালু নেই