শামা রহমানের সারপ্রাইজ

আর একটু পরেই আপনার হাতে তুলে দেওয়া হবে পৃথিবীর অন্যতম সেরা একটি পুরস্কার। সে আনন্দে আপনি যখন বিভোর, তখন হঠাৎই মঞ্চে ভোজবাজির মতো হাজির আপনার প্রিয় শিল্পী, গাইলেন প্রিয় দুটি গান। ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন আপনাকে অন্য এক জগতে। এ তো জাদু, সত্যি এ আনন্দের মুহূর্তের কী কোন তুলনা হয়! ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ’ কমিটি তেমনই একটি দূর্দান্ত জাদুময় সন্ধ্যা উপহার দিলেন এবারের পুরস্কারজয়ী স্যার ফজলে হাসান আবেদকে।

তাঁর হাতে ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ’ পুরস্কার তুলে দেওয়ার দিন ঢাকা থেকে আইওয়া উড়িয়ে আনলেন বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শামা রহমানকে। তিনি তাঁর মোহনীয় কণ্ঠে ‘দূরে কোথাও’ আর ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’র সুরে আবিষ্ট করে রাখলেন আইওয়া স্টেট ক্যাপিটল ভবনের হল রুমকে—সন্ধ্যাটা হয়ে উঠলো জাদুবাস্তবতাময়। আপনার এ আনন্দ ধরা পড়ল চোখের কোনে চিকচিক করে উঠা জলে।

‘পুরোটাই ছিল একটা সারপ্রাইজ। দুই মাস আগে যখন ফুড প্রাইজ কমিটি থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখন প্রথমেই বলে নিয়েছিল এটা খুবই সিক্রেট একটা ব্যাপার। একদমই কাউকে জানানো যাবে না।

আমরা ফজলে হাসান আবেদকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই।’ অনুষ্ঠান শেষে বলছিলেন শামা রহমান। ‘আমি তো দারুণ খুশি। একেতো আমাদের দেশের একজন ব্যক্তি এই সম্মান পেতে যাচ্ছেন, তার ওপর আমি সেই অনুষ্ঠানে গাইব। তবে গানের জন্য বেঁধে দেওয়া সময়ও খুব বেশি নয়। আবার আবেদ ভাইয়ের পছন্দেরও হতে হবে। তাই অনেক ভেবে বাছাই করলাম এই দুটো গান। ‘মঙ্গল বারতা’ তাঁর খুব প্রিয় একটা রবীন্দ্রসংগীত। তিনি খুবই খুশি হয়েছেন। ফুড কমিটি তাঁকে সত্যিই একটা সারপ্রাইজ দিতে পেরেছে।’

ফজলে হাসান আবেদের প্রতিষ্ঠান ব্রাকের ইউএসএ মুখপাত্র স্কট ম্যাকমিলান বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল অনুষ্ঠানে একটা সারপ্রাইজ আছে। তবে কী সারপ্রাইজ সেটা শামা রহমান মঞ্চে ওঠার আগ পর্যন্ত একদমই বোঝা যায়নি। ফজলে হাসান আবেদ সত্যিই আনন্দিত এ আকস্মিক আয়োজনে।’

খাদ্য ও কৃষির নোবেল পুরস্কার বলে খ্যাত এই ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ’ পুরস্কারটি ফজলে হাসান আবেদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ১৫ অক্টোবর। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশ-বিদেশের শতাধিক স্বনামধন্য বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। গান শুরুর আগে উপস্থাপক রবীন্দ্রনাথের গানের প্রসঙ্গ আনতেই পুরো হলরুম উৎসুক হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর হৃদয়গ্রাহী গানের কথা এঁদের অনেকেই জানেন। গান থামলে পুরো হলরুম মুখরিত হয়ে উঠে করতালিতে।

‘এত্ত বড় হারমোনিয়াম কোথা থেকে নিয়ে এলেন’, প্রশ্ন করতেই শামা রহমান বললেন, ‘বাংলাদেশ থেকে হারমোনিয়াম নিয়ে যাওয়া ঝক্কির ব্যাপার। ঝক্কি কিছুটা এড়াতে তাই এই হারমোনিয়াম নিয়ে আসা হয়েছে নিউ ইয়র্ক থেকে।’ তিনি যোগ করলেন, ‘কোন ঝক্কিই ঝক্কি নয়, বাংলাদেশিদের এমন বিজয়গাথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক আর বাংলা গানের সুরের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হোক চারদিকে। এতেই আমাদের আনন্দ।’



মন্তব্য চালু নেই