শামারুখ মাহজাবিন হত্যা মামলা : সাবেক এমপি টিপুসহ ৩ জনকে অব্যাহতি

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শামারুখ মাহজাবিন হত্যা মামলায় যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি টিপু সুলতানসহ তিনজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

ঢাকা মহানগর হাকিম অশোক কুমার দত্ত বৃহস্পতিবার মামলার বাদীর নারাজী আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের মামলার দায় হতে অব্যাহতির আদেশ দেন।

এর আগে মামলার বাদি ডা. শামারুখ মাহজাবীনের বাবা নুরুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদনের উপর নারাজি দেন আদালতে। অন্যদিকে আসামিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেন সিআইডি। আদালত নারাজির আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের অব্যাহতি প্রদান করেন।

২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সিআইডি রমনা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী রুহুল কুদ্দুস ঢাকা সিএমএম আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি টিপু সুলতান, তার স্ত্রী ডা. জেসমিন ও ছেলে হুমায়ুন সুলতান সাদাবকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ডা. শামারুখ মাহজাবীন আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার ৬ নম্বর সড়কের শ্বশুরের বাসভবনে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ডা. শামারুখ মাহজাবিনকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ওই রাতেই ডা. শামারুখের বাবা নুরুল ইসলাম ধানমণ্ডি থানায় আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি (যশোর-৫) টিপু সুলতান, তার স্ত্রী ডা. জেসমিন ও ছেলে হুমায়ুন সুলতান সাদাবকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সিআইডি রমনা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী রুহুল কুদ্দুস ঢাকা সিএমএম আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিদের অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন সকালে তার স্বামীর সাথে বাসা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন। কাঁটাবন এলাকায় পৌঁছলে ডা. প্রত্যয় বিশ্বাস ভিকটিম ডা. শামারুখ মাহজাবীনকে ফোন করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে হুমায়ুন সুলতান তার স্ত্রী ডা. শামারুখ মাহজাবীনের মোবাইল ফোন দিয়ে ডা. প্রত্যয় বিশ্বাসের মোবাইলে কল ব্যাক করেন। কল ব্যাকের মাধ্যমে তিনি কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারেন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে ফোন করেছে। এ ঘটনা নিয়ে ডা. শামারুখ মাহজাবীন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন এবং গাড়ি থেকে নেমে রিকশায় বাসায় যান। তারপর দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে কোনো এক সময় তাদের শয়ন কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত বাথরুমের জানালার গ্রিলে নিজের ওড়নায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

ডা. শামারুখ মাহজাবীন ডায়রিতে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে লিখে গেছেন, তোমার মেয়েটা অনেক দুর্বল। ছোটখাটো সমস্যাও ফেস করতে পারে না। সারাক্ষণ কষ্ট পেয়ে যায় অকারণে। তাই আজ সিদ্ধান্ত নিল যে, She is incompatible to live। ওই ভুল বোঝাবুঝির কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা ফেস করতে না পারায় ডা. শামারুখ মাহজাবীন আত্মহত্যা করেছে বলে সাক্ষ্য প্রমাণে প্রকাশ পায়।

ডায়রিতে আরও লিখেছেন, Partial hanging 100% suicidal.court এ যদি কোনরকমে ওঠে আমি কীভাবে মরলাম, এটাই প্রমাণ হবে। তাই Please আমার আর এই পরিবারের কোন দুর্নাম হতে দিওনা। তিনি তার লেখা ডায়রিতে আত্মহত্যা করার বিষয় কাউকে দায়ী করেননি।

ফলে মামলাটিতে চূড়ান্ত রিপোর্ট ধারা-৩০২/৩৪ পেনালকোড দাখিল করা হল এবং আসামিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করা হল।



মন্তব্য চালু নেই