শাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯০তম সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে সকল সংগঠনের সব ধরনের মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, শ্লোগান ও পোস্টারিং সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তারা এই সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক, সৈরাচারী এবং প্রগতীশীল ধারার উপর আঘাত করেছে বলে মন্তব্য করেন। পাশাপশি ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন অ্যাখ্যায়িত করে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দায়ভার অন্য সংগঠন নিবে বলে জানান ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের নেতারা।

ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করার মাধ্যমে কেন শিক্ষার্থীদের মুক্তচিন্তা ও স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এমন প্রশ্ন করেছেন শাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিবন চক্রবর্তী পার্থ। প্রক্টর ড. হিমাদ্রী শেখর রায়কে গত ২০ নভেম্বর ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনার মুল হোতা দাবি করে তিনি বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাকে দায়িত্বে রেখে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে কোন ষড়যন্ত্র রয়েছে।

শাবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি অঞ্জন রায় প্রশাসনে সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বলেন, শাবির সংঘর্ষের ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন ছিল না।

শাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, ছাত্র সংগঠনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার জড়িত ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের বিচার না করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া প্রশাসনে ঠিক হয়নি বলে তিনি মনে করেন।

শাবি ছাত্রদলের আহবায়ক এস.এম. জাহাঙ্গির জানান, অবৈধ সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী ও শাবি ভিসি ও প্রক্টরের পোষা পেটোয়া বাহিনীর অভ্যন্তরীন কোন্দলের দায় ছাত্রদল নিবে না। আমরা আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাব।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শাবি শাখার সভাপতি অনিক ধর বলেন, সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব এবং তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অপরাজনীতির দায়ভার অন্যকোন ছাত্র সংগঠন নিতে পারে না। ওই ছাত্র সংগঠনের দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে অন্য সংগঠনগুলোর উপর চাপিয়ে দিয়েছে তা ঠিক নয়। রাজনীতি এবং ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে সংঘর্ষের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সব ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে জাতীয় ছাত্রদল শাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস খোললেও ছাত্র রাজনীতিকে আগাত করেছে। প্রশাসন ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে প্রগতীশীল ধারার উপর আঘাত করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ছাত্র ইউনিয়নের শাবি সভাপতি শ্রীকন্ত শর্মা বলেন, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। এই ধরনের সিদ্ধান্ত সৈরাচারী সিদ্ধান্তের বহি:প্রকাশ বলে তিনি মনে করেন। প্রশাসন মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য, ২০ নবেম্ভর শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিবন চক্রবর্তি পার্থ, সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান সমর্থিত এবং সহসভাপতি অঞ্জন রায়, বহিকৃত ছাত্রলীগ নেতা উত্তম কুমার দাশের সমর্থিত কর্মীদের সংঘর্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ক্যাম্পাস খোলে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেয়।



মন্তব্য চালু নেই