শহরে পানি ঢুকতে দিন

বিবর্তন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। আর এই স্বাভাবিক নিয়মে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাড়া দিয়ে মানুষও ধীরে ধীরে বিবর্তনের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখে। একদিকে মানুষ যেমন পরিবর্তিত প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, তেমনি নিজের প্রয়োজনে মনুষ্যসৃষ্ট অনেক কিছুরও পরিবর্তন করে নেয়। গোটা পৃথিবী জুড়ে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সর্বাধিক আলোচিত। শিল্পোন্নত দেশগুলোর বিরামহীন শিল্পায়ন আর ভয়ংকর সব যুদ্ধের কারণে প্রকৃতির নিজস্ব হিসেব লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি বিক্ষিপ্ত আচরণ শুরু করেছে। আইলা, সিডর কিংবা স্যান্ডির মতো প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়গুলো এই বিক্ষিপ্ত আচরণের উদাহরন। আর এই ক্ষতির দায়ভার প্রাথমিকভাবে নিতে হচ্ছে কথিত অনুন্নত দেশগুলোকে।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে কিভাবে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে এবং খুব ধীরে পানির স্তর বেড়ে যাচ্ছে। গত পনেরো বছরে অনেকগুলো দেশের সমুদ্রের পানির স্তর প্রায় দুই ফুট পর্যন্ত বেড়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ নদী নির্ভর হওয়ার কারণে ওই অঞ্চলে এখনও পানির স্তর বেড়ে যাওয়ার কোনো সরাসরি প্রভাব পরেনি। তবে ইউরোপের অনেক দেশই আগাম প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ভেনিস কিংবা আমস্টারডামের কথা। শহরের মধ্যে আজ যেখানে আমরা লম্বা লম্বা সড়ক কল্পনা করি সেখানে এই দুটি শহরে আছে সরু সরু খাল। যে খাল সরাসরি সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত। সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার কারণে জোয়াড়-ভাটার স্বাভাবিক নিয়ম শহরের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলে। আর শহরবাসীও তাই পানির সঙ্গে খাপ খায় এমন জীবন পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছে।

ভেনিস এবং আমস্টারডামের মতো শহরের ভেতর দিয়ে খাল করার চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব তীরের কিছু শহর। দুবছর আগে যখন প্রাণঘাতী ঘুর্ণিঝড় স্যান্ডি বোস্টন শহরে আঘাত হেনেছিল মূলত তখন থেকেই এই বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে ভাবছে বোস্টনবাসী। যে সময়টায় স্যান্ডি আঘাত হেনেছিল তার কয়েকঘণ্টা আগে যদি আঘাত হানতো তাহলে পূর্ণ চাঁদের কারণে ঘুর্ণিঝড়ের প্রকোপতা আরো বাড়তো এবং গোটা বোস্টনই পানির তলে হারিয়ে যেতো।
স্যান্ডির আঘাতের পরই শহরের বন্যার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ত্রুটির বিষয়টি আলোচনায় আসে। সেবারই প্রথম প্রমাণিত হয় যে, বাধ চূড়ান্ত অর্থে সকল সময় মঙ্গলজনক নয়। পরিবেশবিদরা সংশয় প্রকাশ করেছেন যে চলতি শতকের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বতীরে সমুদ্রের পানির স্তর প্রায় ছয় ফুট উচ্চতায় বেড়ে যাবে। কারণ গত কয়েক দশক ধরেই বোস্টন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের হার বেড়েছে।

বোস্টন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেনিস কার্লবার্গ বলেন, ‘শহরকে পানি থেকে বাঁচানোর জন্য কার্যকরী পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কারণ এখানকার মানুষ এখন পানিকে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু পানিকে ভয় না পেয়ে যদি আমরা পানিকে শহরের মাঝে আসতে দেই তাহলে কি হবে। পানিকে আসতে দিয়ে কিভাবে বোস্টনবাসীর জীবনযাপন উন্নত করা যায় সেদিকে নজর দেয়া যেতে পারে।’

শহরের মাঝে খাল করার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন ইতোমধ্যেই। তাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন বোস্টনের প্রধান পরিবেশবিদ ব্রায়ান সুইট। তিনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বোস্টন শহরের কিছু নমুনা তুলে ধরেছেন সবার সামনে। যেখানে শহরের মাঝে খাল এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে হস্তচালিত ও যান্ত্রিক নৌকাকে দেখানো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই