শফিক রেহমানের বাসায় পাওয়া নথি প্রধানমন্ত্রীর পরিবার সম্পর্কিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেপ্তার প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসায় তার ও তার পরিবারের সদস্যদের অর্থসংক্রান্ত নথি জব্দ করা হয়েছে। পদ্মাসেতুর বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছিল, কিন্তু কিছুই পায়নি। নথিগুলো সেসবেরই রিপোর্ট।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
এসময় সজীব ওয়াজেদ জয়ের অ্যাকাউন্টে ৩০০ কোটি ডলারের যে অবৈধ লেনদেনের দাবি করা হচ্ছে তা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রমাণ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি ঢাকায় বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, জয়ের অ্যাকাউন্টে অবৈধ টাকা রয়েছে।
এর কয়েক দিন পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এক অনুষ্ঠানে বলেন, এফবিআইয়ের (যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা) একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সেখানে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি অ্যাকাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ তিনশো মিলিয়ন ডলার জমা আছে। এটি সন্দেহজনক লেনদেন।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় বলেন, পদ্মাসেতুর বিষয়ে তার নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধান করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। তারা সন্দেহজনক কোনো তথ্য পায়নি। এ সংক্রান্ত এফবিআইএর রিপোর্ট শফিক রেহমানের বাসায় পাওয়া গেছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল সকালে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসা থেকে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এরপর তাকে দুই ধাপে রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে থাকা অবস্থাতেই শফিক রেহমানকে সাথে নিয়ে তার রমনা থানার ইস্কাটন গার্ডেন রোডের ১৫ নম্বর বাসায় তল্লাশি চালায় ডিবি পুলিশ। তার পড়ার কক্ষ ও ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে তল্লাশি চালালো হয়। এসময় বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিক শফিক রেহমানের দু’দেশের দু’টি পাসপোর্ট এবং এফবিআইয়ের নথিসহ কিছু ব্যক্তিগত ফাইলপত্র জব্দ করা হয় বলে জানায় পুলিশ।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন থানায় মামলা হয়। ওই বছর আগস্ট মাসে মামলাটি তদন্ত শুরু করে ডিবি। মামলার এজাহারে শফির রেহমান আসামি ছিলেন না। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তীতে তদন্তে তার সম্পৃক্ততা পায়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আগে যে কোনো সময় জাসাস সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ উল্লাহ মামুন ও তার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারসহ আসামিরা পল্টনস্থ জাসাস কার্যালয়ে, নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্যে ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একত্রিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী পুত্র বর্তমান তথ্য উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণপূর্বক হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আসামি মোহাম্মাদ উল্লাহ মামুন ও বিএনপি ও বিএনপি জোটভুক্ত নেতৃত্ব আসামি সিজারকে দায়িত্ব দেয়। ওই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে সিজারের ৪২ মাসের কারাদণ্ড হয়।
এসময় জয়ের ব্যক্তিগত নথি সংগ্রহের জন্য এফবিআই এর সাবেক স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিককে (৫৩) ঘুষ দেয়া হয়েছিল। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মার্কিন আদালতে লাস্টিকের ৫ বছরের জেল হয়। বিএনপির ওই নেতাও আদালতে তাদের দোষ স্বীকার করেন।
গ্রেপ্তারের পর শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রহমান সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, তার স্বামী এফবিআই এর সাবেক এজেন্টকে ঘুষ এবং বিএনপি নেতাদের দায় স্বীকারের বিষয়টি জানতেই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। ওই সাবেক এজেন্টের সাথে তিনি দেখাও করেছিলেন।বাংলামেইল
মন্তব্য চালু নেই