শতাধিক এনজিওর বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে এনবিআর

দেশের শতাধিক এনজিওর আয় ও ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখতে অভিযানে নামছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে এনজিওতে কর্মরত শীর্ষ কর্মকর্তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাবও খতিয়ে দেখা হবে।

এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) কর্মকর্তাদের নিয়ে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই টাস্কফোর্স কমিটি এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের উৎস ও ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখবে। তদন্তে যদি এনজিও এবং এনজিও কর্মকর্তার আয়-ব্যয়সংক্রান্ত হিসাবে গরমিল কিংবা কোনো অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। আর ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে। তদন্ত শেষে ওই টাস্কফোর্স কমিটি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।

অনেক এনজিও এবং এনজিও কর্মকর্তারা দারিদ্র্য বিমোচনমূলক কার্যক্রমের আড়ালে দেশে নাশকতা ও সরকারবিরোধী কাজে জড়িত রয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর এনবিআর এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে গেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক এনজিও এবং এনজিওতে কর্মরত কর্মকর্তার হিসাব খতিয়ে দেখার কথা থাকলেও প্রথম ধাপে বিদেশ থেকে অনুদান পাওয়া প্রথম সারির ৫৫টি এনজিও এবং এ সব এনজিওর শীর্ষ কর্মকর্তাদের হিসাব যাচাই করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন এনজিও সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে ইতিমধ্যে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, সমাজসেবা অধিদপ্তর, এনজিওতে অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এবং বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের কাছে সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দিয়েছে টাস্কফোর্স। তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই শেষে অভিযানে নামা হবে।

সূত্র আরো জানায়, এনজিওগুলোর অর্থ সংগ্রহ, ব্যয়ে স্বচ্ছতাসহ নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনায় গত বছর ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন’ প্রণয়ন করা হয়। এ আইন অনুসারে এনজিওর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো এনজিও প্রকল্প পরিচালনা করতে পারবে না। এ ছাড়া এনজিওতে বিদেশি নিয়োগ করতে হলে ব্যুরোর অনুমোদন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। বৈদেশিক অনুদানের টাকা একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রহণ ও ছাড় করারও নিয়ম রয়েছে। এমন সব আইন থাকলেও তা মানছে না অনেক এনজিও। আইন মেনে অর্থ সংগ্রহ এবং ব্যয় করা হচ্ছে কি না, তা এনবিআরের তদন্তে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ এনজিওর কার্যক্রম শহর ছাড়িয়ে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় চলছে। বড় মাপের অধিকাংশ এনজিওতে দেশি-বিদেশি ব্যক্তিরা উচ্চ বেতন-ভাতায় কর্মরত আছেন। সারা দেশে রয়েছে এসব এনজিওর শাখা। এসব এনজিওর সুবিধাভোগীর সংখ্যাও কম নয়। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এনজিওর কার্যক্রমের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মসূচি।

এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর হিসাবমতে, দেশে নিবন্ধিত এনজিওর সংখ্যা ২ হাজার ৩০৩টি। এর বাইরেও অনেক এনজিও কাজ করছে। তাই তদন্তে এনজিও কোন প্রকল্পের আওতায় কী কী কাজ করছে, ওই এনজিওর সুবিধাভোগী কারা, দারিদ্র্য বিমোচনের নামে বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় ওই এনজিওর কোনো কর্মকর্তা জড়িত কি না, ইত্যাদি বিষয়ে তদন্ত করবে এনবিআরের ওই টিম। এরপর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।

প্রসঙ্গত, বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে কোনো অনুদান গ্রহণ করলে অনুদানের সমপরিমাণ বা তিন গুণ জরিমানা গুনতে হবে সংশ্লিষ্ট এনজিওকে। এ ছাড়া এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর আইন অমান্যকারী এনজিওর নিবন্ধন বাতিল, স্থগিত বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে। দেশের প্রচলিত আইনের অধীনে তাদের শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই