লোকসান নিয়ে উৎপাদনে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল
প্রায় ৫০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে শুক্রবার থেকে উৎপাদনে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল। চলতি উৎপাদন মওসুমে এবার ৮০ হাজার টন আখ মাড়াই করে পাঁচ হাজার ৮শ’ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আখের সঙ্কট না হলে ৯০ দিন চিনিকলটি চালু থাকবে বলে মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গত ২০১১-১২, ১৩ ও ১৪ মওসুমের ১২ হাজার ৬শ’ টন চিনি গুদামে পড়ে আছে। যার মূল্য ৫২ কোটি টাকার ওপরে। বিপুল পরিমান চিনি অবিক্রিত থাকায় কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না বলে জানান শ্রমিক নেতারা।
ঠাকুরগাঁও চিনিকল কর্মচারী ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস জানান, তাদের অনেকের দুই এক মাস করে বেতন বকেয়া রয়েছে। যারা অবসরে গেছেন তাদের সবার গ্রাচুয়িটির টাকাও বকেয়া রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু জানান, চলতি মওসুমে চিনি উৎপাদনের হার ধরা হয়েছে ৭ ভাগ। তবে আমদানিকৃত সঙ্গে উৎপাদিত চিনির গুণগতমান একই রকম বজায় রাখতে হবে। এজন্য উৎপাদিত চিনির পরিশোধন ও বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন। একইসঙ্গে উৎপাদিত চিনির মূল্য বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করতে হবে।
এদিকে, ৫৬ বছরের পুরাতন যন্ত্রপাতি নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা ঠাকুরগাঁও চিনিকলের বেশীর ভাগ যন্ত্রপাতি জরাজীর্ণ। জোড়াতালি দিয়ে কারখানাটি চালু রাখায় প্রতি বছর হঠাৎ করেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দক্ষ জনবল, ফোরম্যান, ম্যাকানিক, এটেন্ডেন্ট, সিনিয়র প্যানম্যান, ল্যাব কেমিস্টসহ দক্ষ শ্রমিকের সঙ্কট রয়েছে। ফলে মিলের আখ মাড়াই ও চিনি বিপনন তুলনামূলক হ্রাস পেয়েছে।
পুরাতন যন্ত্রপাতির বেশীরভাগ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে যন্ত্রপাতির ক্রটিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত না করায় আশানুরুপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ জানান, মিল এলাকায় বেশকিছু ব্যবসায়ী পাওয়ার ক্রাসারে গুড় তৈরি করে থাকে। তারা চড়া দামে আখ কিনে গুড় তৈরি করায় অনেক চাষি গুড় উৎপাদনকারীদের কাছে নগদ টাকায় আখ বিক্রি করছে। ফলে প্রতি বছর আখ সঙ্কটের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই চিনিকলটি বন্ধ হয়ে যায়।
আব্দুল আজিজ আরও জানান, ইতোমধ্যে আখের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা এ বছর চিনিকলে আখ বিক্রি করতে উৎসাহিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও আখ চাষীদের চিনিকলের আওতায় আখ বিক্রি করতে বাড়িতে বাড়িতে উঠান বৈঠক করে উৎসাহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য চালু নেই