লোকসানের মুখে খামারীরা : হঠাৎ করেই বেড়েছে ১ দিনের বাচ্চার দাম

মোঃ কাসেমুর রহমান শ্রারণ, মাগুরা প্রতিনিধি : মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ১ দিনের বাচ্চার দাম বেড়েছে ৩ গুন। শুধু মাত্র এ কারণেই ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে মাগুরার পোল্ট্রি খামারীরার। অনেকে দেনার দায়ে খামার বন্দ করে দিয়েছে।

খামারীরা জানান,মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে প্রতিটি ১ দিনের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে ৩ গুন। ১ বছর আগে প্রতিটি ১ দিনের ব্রয়লার বাচ্চার দাম ছিল ১৭ থেকে ১৮ টাকা। বর্তমানে যা এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৩০ দিনে ৩ কেজি খাবার খায় যার বর্তমান বাজার দর ১২৬ টাকা। ঔষধ , বিদ্যুৎ বিল,শ্রমিক ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে তার পেছনে আরো খরচ হয় ৩০ টাকা। এ সময় তার ওজন দাড়ায় ১ কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। চলতি বাজার মূল্যে ১২০ টাকা হিসেবে ওই ব্রয়লার মুরগির দাম দাড়ায় ২০৩ থেকে ২১৫ টাকা। অথচ এটার পেছনে খরচ দাড়াচ্ছে ২২১ টাকা । ফলে ্একটা বাচ্চাতে প্রতি খামারীদের লোকসান দাড়াচ্ছে ৬ থেকে ১৮ টাকা। যে খামারে ১০০০ মুরগির বাচ্চা আছে তাদের প্রতি চালানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।

লেয়ার মুরগির খেত্রে এই লোকসানের পরিমার আরো বেশী। কারণ প্রতিটি লেয়র বাচ্চার বর্তমান দাম ১০৫ থেকে ১১০ টাকা যা তিন মাস আগে ছিলো মাত্র ৩২ টাকা। এ বিষয়ে শহরের পিটিআই সড়কের মাইশা পোল্ট্রি ফিড ঘরের মালিক আজাদ রহমান স্বপন বলেন,১ দিনের বাচ্চার দাম বেড়ে যাওযায় জেলার কমকরে ৫০ জন খামারী ব্যাবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এসব খামারীদের কাছে তাদের অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে। যা পোল্ট্রি ফিড ব্যাবসায়িদের সমান ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। শুধু বন্ধ খামারী নয় চালু খামার দের কাছেও তাদের কোটি কোটি টাকা পড়ে আছে। যা ব্যবসার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শহরের নতুন বাজারের আর এক পোল্ট্রি ফিড ব্যাবসায়ী জানান, কিছু সিন্ডিকেটের কারণে হঠাৎ করেই ১ দিনের বাচ্চার এই দাম বৃদ্ধি করেছে।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার বেলনগর গ্রামের খামারী মোঃ ইয়াসির আরাফত জানান,২০০৫ সাল থেকে তিনি পোল্ট্রি খামারের ব্যাবসার সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমানে তার একটি লেয়র খামারে ২০০০ মুরগী আর ব্রয়লার খামারে ১৫০০ মুরগী আছে। বিগত ৩ টি চালানে তিনি প্রায় ২ লক্ষ টাকার লোকসান গুনেছেন। এখন খামার কিভাবে চালাবেন সেই দুচিন্তাই ভুগছেন। মাগুরা সদর উপজেলার ১নং হাজীপুর উইনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের মোঃ কাটু মীর জানান যে,বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ১ দিনের বাচ্চর দাম এত পরিমান বেড়েছে যে,নগদ এক কালীন অর্থ বিনিয়োগ করা দূরহ হয়ে পড়েছে। কারণ ১ দিনের বাচ্চা সম্পুর্ণ নগদ অর্থে কিনতে হয়। এমনকি ২ মাস আগে কম্পানীতে অর্থ জমা দিয়ে রাখতে হয়। দাম বাড়ার কারণে তার প্রায় ৩ লক্ষ নগদ অর্খ প্রয়োজন ১ চালানের ১ দিনের বাচ্চা উঠাতে। এই খাতে নগদ অর্থের চাহিদা বেড়ে যাওযায় জন্য অন্য খাতের অর্থের জোগার দেয়া মুসকিল হয়ে পড়েছে। ব্যাবসায়িদের কাছ থেকে খাবার বাকীতে নিতে হচ্ছে। সেখানে বিপুল পরিমান টাকা বাকি পড়ে যাওযায় তারা নতুন করে খাবার, ঔষধ বাকি দিতে চাচ্ছে না। ফলে খামার বন্দ করে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকছেনা। একই ধরনের বক্তব্য শিবরামপুরের খামারী শান্ত রহমানের ও পারলার কসাইপাড়ার মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তার।

এক দিনের বাচ্চার দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কাজী ফার্ম এর প্রতিনিধি মোঃ আওলাদ হোসেনের কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘উৎপাদন থেকে চাহিদা বেশী থাকার করণে কোম্পানী দাম বাড়িয়েছে’

এ বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কানাইলাল স্বর্ণকার বলেন,‘মুরগির খাবার ও এক দিনের বাচ্চার দাম প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনায় কর্তৃক নির্ধারিত কিন্তু বিভিন্ন এক দিনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানীরা এটি মেনে চলছেনা। বিষয়টি মন্ত্রনালয়কে জানানো হবে।’

সরকারী হস্তখেপে এখন মুরগির খাবারের দাম অত্যন্ত সহনশীল। সবকারের উচিৎ এক দিনের বাচ্চার ক্ষেত্রেও সমান নজর দারী করা।



মন্তব্য চালু নেই