“লোকটি এখনও মারা যাননি, উনার কষ্ট আর সহ্য হয় না”
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিনই এখানে আসেন শতশত রোগী। সবার সঙ্গেই আছেন দেখা-শোনার লোক। মাঝে মধ্যে রোগীর লোকজন এতই বেশি হয়ে যে ‘বকাঝকা’ করে বাইরে বের করেন নার্সরা। এরমধ্যে ব্যতিক্রম শুধু একজন। জীর্ণ শরীর, বিছানার চারপাশে মাছি ভনভন করছে। যত্ন আত্তির কেউ নেই।
পাশ দিয়ে কেউ গেলেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। এই বুঝি কেউ এল! আসে না। সেবা-যত্নহীন মানুষটি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। হাড্ডিসার মানুষটি ঠিকানাও বলতে পারছেন না।
কখন, কে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন তাও জানেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আশপাশের রোগী বা রোগীর স্বজনরাও জানেন না। একজনতো বলেই উঠলেন, ‘লোকটি এখনও মারা যাননি, উনার কষ্ট আর সহ্য হয় না।’
গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেজিস্ট্রার্ড অনুযায়ী তিনি ভর্তি হয়েছেন ১৮ মে। নামের স্থানে গৌরাঙ্গ, বাবা মৃত ধীরেন্দ্র লেখা থাকলেও নেই কোনো ঠিকানা। তবে গৌরাঙ্গও তার প্রকৃত নাম কী না, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বলতে পারেন না কথাও, মুখ আওড়িয়ে যা বলেন তাও অস্পষ্ট। অনেক নিরুত্তর প্রশ্নের পর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ কিনা জানতে চাইলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জানান দেন তিনি।
এদিকে শনিবার (৪ জুন) সকালে অজ্ঞাতনামা মুমূর্ষু রোগীর খবর পেয়ে এই ব্যক্তির প্রাথমিকভাবে দেখভাল ও চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে গৌরীপুর যুগান্তর স্বজন সমাবেশ। স্বজন উপদেষ্টা মো. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘রোগীর পরনের কাপড়-চোপড়ও নষ্ট। হাসপাতালের দেয়া খাবার বাক্স ভর্তি আছে, খেতে পারছেন না। তাই তার দৈনন্দিন ওষুধ ও কাঙ্ক্ষিত খাবার এবং সেবাযত্ন করার জন্য সবার সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’ ওই রোগীর স্বজনদের ঠিকানা বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার পলাশ সরকার বলেন, ‘রোগীটি অত্যন্ত দুর্বল, কথা বলতে পারে না, ঠিক মতো কোনো কিছু খেতেও পারে না। আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরো জানান, এই ধরনের রোগীর পরিচর্যার জন্য সার্বক্ষণিক একজন লোক দরকার। রোগীর অবস্থা ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
মন্তব্য চালু নেই