লুপাস সমস্যায় আপনি যা করতে পারেন
জটিল একটি রোগ হচ্ছে লুপাস। লুপাস হওয়ার কারণ এখনো অজানা। বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু মানুষ জন্মগতভাবে এমন জিন পায় যা ইমিউন সিস্টেমের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এই ধরণের মানুষদের লুপাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়, রাসায়নিক দ্রব্যের প্রতিক্রিয়ায়, ধূমপানের কারণে, ইনফেকশনের কারণে এবং সূর্যের আলোর প্রভাবে লুপাস হতে পারে। লুপাস সংক্রামক নয়। যেকোন বয়সের নারী বা পুরুষের লুপাস হতে পারে। তবে ১৫-৪৪ বছর বয়সের নারীদের লুপাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিছু গবেষক মনে করেন যে, ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন মহিলাদের ইমিউন সিস্টেমের উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে মহিলাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
লক্ষণ সমূহ :
· নিয়মিত ক্লান্ত বা অবসন্ন বোধ করা
· জয়েন্টে ব্যাথা
· গালে ও নাকে প্রজাপতি আকৃতির র্যাশ হওয়া
· চুল পড়া
· রক্ত জমাট বাঁধা
· আলোর প্রতি স্পর্শকাতর হওয়া
· নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুকে ব্যাথা হওয়া
· মুখে ঘা হওয়া
· চোখের চারপাশ বা পা ফুলে যাওয়া।
· ত্বকে জ্বলুনি মাঝারি থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
লুপাস হলে জয়েন্ট, ত্বক, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট, স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্যান্য অঙ্গ আক্রান্ত হয়। লুপাস আছে এমন শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষেরই আরথ্রাইটিস এবং স্কিন র্যাশের সমস্যা হয়, অর্ধেকের কিডনি সমস্যা থাকে। লুপাস আক্রান্তদের ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে।
অ্যান্টিনিউক্লিয়ার এন্টিবডি(ANA) পরীক্ষার মাধ্যমে লুপাস নির্ণয় করা যায়। ইমিউন সিস্টেম প্রাকৃতিক ভাবে রোগ প্রতিরোধ করে। ANA ব্লাড টেস্ট যদি পজেটিভ আসে তার মানে এই নয় যে তাঁর লুপাস হয়েছে। ANA পজেটিভ আসলে ভালো বা খারাপ দুটোই হতে পারে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ২ জনের ANA পজেটিভ আসে। ANA পজেটিভ আসলে লুপাস এর পাশাপাশি অন্য অটো ইমিউন কন্ডিশন যেমন- থাইরয়েড ও লিভারের সমস্যা ও হতে পারে।তাই ANA টেস্ট পজেটিভ আসলে লুপাসের লক্ষণ গুলো পর্যবেক্ষণ করে ডাক্তার ঔষধ দেবেন।
প্রকারভেদ:
সাধারণত ৫ ধরণের লুপাস হয়ে থাকে, যেমন-
· সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথ্রিমেটোসাস – এই প্রকার লুপাস হলে জয়েন্ট ও অর্গান আক্রান্ত হয়।
· ডিস্কয়েড লুপাস – এই প্রকার লুপাস হলে স্কিন আক্রান্ত হয়।
· সাব- একিউট কন্টানিয়াস লুপাস ইরাইথ্রিমেটোসাস – নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা যায়, ত্বকে কোন দাগ হয়না।
· ড্রাগ ইন্ডিউস লুপাস – ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়।
· নিউনেটাল লুপাস – নবজাতক আক্রান্ত হয়।
লুপাস সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। দ্রুত রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং কোন অঙ্গ ও টিস্যুর স্থায়ী ক্ষতি কমানো যায়। একবার রোগ নির্ণয় করা হয়ে গেলে বৃহৎ অঙ্গগুলির (সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম, কিডনি, হার্ট, ফুসফুস) নিয়মিত মনিটর করতে হয়। রোগের লক্ষণ ও বিস্তারের উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে।
লুপাস নিয়ন্ত্রণে রাখায় জন্য যা করা প্রয়োজন-
১। স্ট্রেসের কারণে লুপাসের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। তাই দৈনন্দিন কাজ গুলোকে অনাড়ম্বর করার চেষ্টা করুন।
২। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার কাঁটা ইত্যাদি ব্যায়াম গুলো করলে চাপ কমবে, মাথা পরিষ্কার থাকবে, মেজাজ ভালো করবে এবং ক্লান্তি দূর করবে।
২। শিথিলতার কৌশল গুলো আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন, যেমন- মেডিটেশন, ইয়োগা ইত্যাদি।
৩। বিশ্রাম নিন, লুপাস আক্রান্তদের অনেকেরই ১২ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন হয়।
৪। ক্লান্তিকর কাজ কম করুন। আস্তে আস্তে কাজ করুন।
৫। অন্যদের সাহায্য নিন। একা একা সব কাজ করার চেষ্টা করবেননা।
৬। কাজের মাঝে বিরতি নিন।
৭। যদি বিষণ্ণতার পরিমান বেড়ে যায় তাহলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।
৮। সূর্যের আলো এড়িয়ে চলুন। সূর্যের আলোতে ত্বকের জ্বলুনি বেড়ে যেতে পারে। বাহিরে যাওয়ার সময় সানব্লক ব্যবহার করুন। মাথায় ক্যাপ পড়ুন এবং যতটা সম্ভব ঢেকে বাহিরে যান।
৯। ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে জ্বর উঠলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
১০। নিয়মিত ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মিত চেকআপ করুন। সাধারণত ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট করুন।
১১। কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে আপনার ডাক্তারকে জানান।
সযত্ন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে লুপাসকে নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। কিছু সীমাবদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। তবে ধৈর্য ও আশা হারিয়ে ফেললে আক্রান্ত ব্যাক্তির হতাশা ও বিষণ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে খারাপ অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
মন্তব্য চালু নেই