লাল চন্দনকাঠ চোরাচালানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড এই সুন্দরী মডেল
লাল চন্দনকাঠের আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের অন্যতম পাণ্ডা নাকি এই কলকাতারই মেয়ে। নাম সংগীতা চট্টোপাধ্যায়। ভারতের চিত্তুর পুলিশের (অন্ধ্র প্রদেশ) তেমনই দাবি। সংগীতা থাকে নেতাজিনগরে। গত সপ্তাহের বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তার বাড়ি থেকেই। চিত্তুর পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল তাকে গ্রেপ্তার করে আলিপুর কোর্টে তোলে। সংগীতাকে চিত্তুর নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রানজিট রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় তারা। অন্যদিকে জামিনের আবেদন জানানো হয় সংগীতার তরফেও। আদালত সংগীতার অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুরও করে। সঙ্গে নির্দেশ দেয় আগামী ১৮ তারিখের মধ্যে তাকে চিত্তুরের আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। পেশায় মডেল সংগীতা কিছুদিন বিমানসেবিকার কাজ করে। কিছুদিন টিভি সিরিয়ালে কাজ করে। তবে পড়াশুনো বেশি দূর এগোয়নি। মাধ্যমিক পাশের পর মডেলিং দুনিয়ায় যাতায়াত শুরু হয় সংগীতার। বিমানসেবিকা থেকে চন্দনকাঠের আন্তর্জাতিক চোরাচালানের কেন্দ্রে কী করে পৌঁছাল সংগীতা? পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে লাল চন্দনকাঠের আন্তর্জাতিক চোরাকারবারের মূল পাণ্ডা মারকোন্ডান লক্ষ্মণ, ওরফে লক্ষ্মণ ডাঙ্গে, ওরফে তামাংকে গ্রেপ্তার করা হয়। নেপাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চিত্তুর পুলিশ। লক্ষ্মণকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে সংগীতার নাম। সংগীতা ছিল লক্ষ্মণের প্রেমিকা। লক্ষ্মণের কাছ থেকেই লাল চন্দনকাঠের আন্তর্জাতিক চোরাচক্রের সঙ্গে পরিচিত হয় সংগীতা। চোরাচালান চক্রের খুঁটিনাটি রপ্ত করে সে। এরপর নিজেই ধীরে ধীরে জাল বিস্তার করতে শুরু করে। পুলিশ বলছে, পরের দিকে লক্ষ্মণের যা নেটওয়ার্ক ছিল, তার মূল কারণই নাকি সংগীতা। মুম্বাই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা তো বটেই, এমনকী বিদেশেও নেটওয়ার্ক ছড়াতে সাহায্য করে সে। চোরাই চন্দনকাঠ বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে, এমনকী বর্ডার পেরিয়ে চলে যায় মিয়ানমার ও অন্যান্য পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে। তবে অধিকাংশের ঠিকানাই মিয়ানমার। সেটাই প্রধান বাজার। সম্পূর্ণ অপারেশন করতে লাগে প্রচুর লোক, বিশ্বস্ত লোকজন। প্রয়োজন নেটওয়ার্কিংয়ের। লক্ষ্মণের হয়ে সেই গুরুদায়িত্ব সামলাত সংগীতা। গত কয়েক বছরে চোরাচালানের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা কামিয়েছে দুজনে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার পর মডেলিং শুরু করে সংগীতা। পরে কিছু টিভি কমার্শিয়ালেও অভিনয় করে সে। বিমানসেবিকার কোর্স করার পর ওই পেশাতেও কিছুদিন ছিল সংগীতা। সে সময় কলকাতায় যাতায়াত ছিল লক্ষ্মণের। সে আদতে মণিপুরের বাসিন্দা। কিন্তু পরবর্তী জীবনে থাকত চেন্নাইয়ে। সস্ত্রীক গোছানো সংসার সেখানেই। কিন্তু চোরাচালানে ক্রমশ বেড়ে ওঠা নতুন ডনের তখন সারা দেশজুড়ে যাতায়াত। আজ দিল্লি, কাল পটনা, পরশু কলকাতা। কলকাতা এসেই শুরু হত ল্যাভিশ পার্টি। তাতে মদের ফোয়ারা ছুটত। লেগে থাকত নতুন নতুন মডেলদের আনাগোনা। হঠাৎ এমনই এক পার্টিতে লক্ষ্মণের চোখে পড়ে যায় সংগীতা। সংগীতারও তখন আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন। অঙ্ক মিলে যায়। দুইয়ে দুইয়ে চার। কলকাতায় অস্থায়ী আস্তানা তৈরি হয় লক্ষ্মণের। এ যেন ডন-থ্রি। পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, জুলাই ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত, দেশের বৃহত্তম চন্দনকাঠ স্মাগলার ছিল লক্ষ্মণই। তবে ধরা পড়ার পর থেকে ব্যবসা কমতে শুরু করে। পুলিশ বলছে, চোরাই লাল চন্দনকাঠের গোডাউনগুলির অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সংগীতা। সেই খোঁজ দিতে পারে, কোথায় কত আছে।
মন্তব্য চালু নেই