লালমনিরহাটে তামাক কোম্পানীর সহযোগিতায় নেশা আবাদে মাতোয়া কৃষকরা
তামাক নিয়ন্ত্রন আইনকে তোয়াক্কা না করে তামাক কোম্পানীগুলোর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করে লালমনিরহাটের কৃষকদের মাতোয় করে তুলেছে তামাক চাষে। তামাক কোম্পানীগুলোর অসাধু প্রলোভন পেয়ে অধিক লাভের প্রত্যাশায় কৃষকরা তামাক চাষে মনোনিবেশ করছেন আর এতে করে বরাবরই তামাক চাষ বেড়েই চলেছে।
তামাক চাষ একদিকে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি কমায় অন্যদিকে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হুমকী হয়ে দাড়িয়েছে। সরকারীভাবে কৃষি পন্যের নির্ধারিত বাজারমুল্য আর বিকল্প ফসল চাষের ব্যবস্থা না করায় কৃষকরা তামাক চাষের জন্য কোম্পানীগুলোর পরামর্শই গ্রহন করছেন সাদরে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি) সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার লালমনিরহাটে দ্বিগুন জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। গত বছর ২০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হলেও এবার তা বেড়ে ৪০ হাজার একর হয়েছে বলে সুত্র জানিয়েছে।
তবে সুত্রটি আরো জানিয়েছে উপর মহলের চাপ থাকায় তারা তামাক চাষের জন্য মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ রেকর্ড সংগ্রহ করে থাকেন আর এ হিসবে থেকে তামাক চাষের পরিমান আরো অনেক বেশী।
খামার বাড়ীর এক কর্মকর্তা না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, সরকার এ খাত থেকে বিপুল পরিমানে রাজস্ব পাওয়ার কারনে তামাক চাষ বৃদ্ধি রোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। তামাক চাষ থেকে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি অফিসকে বলা হলেও কোন চাপ না থাকায় এর কোন ফরাফল আসছে না। আসলে তামাক চাষে কোন লাভ নেই বরং ক্ষতিই ব্যাপক। তামাক লাগানো থেকে তোলা পর্যন্ত পরিবারের লোকজন দিয়ে যে পরিশ্রম করা হয় তাতে পারিশ্রমিকের মুল্য আসে এক সাথে আর কৃষকরা এটাকে সন্তোষজনক লাভ ভেবে থাকে বলে খামার বাড়ীর ওই কর্মকর্তা জানান।
লালমনিরহাট সদরের কর্ণপুর গ্রামের কৃষক জহির আলী জানান, গতবছর তিনি দুই বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন আর এবছর তা বাড়িয়ে চার বিঘা করেছেন। তামাক চাষ থেকে লাভবান হওয়ায় তিনি তামাক চাষ বৃদ্ধি করেছেন বলে উল্লেখ করে কৃষক জহির বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো তাদের কার্ড দিয়েছে ন্যায্য মুল্যে তামাক ক্রয়ের জন্য। তামাক বিক্রি নিয়ে আমাদের কোন দুশ্চিন্তা করতে হয় না। আর আমরা জানি তামাকের মুল্য কত হবে। কাজেই তামাক চাষ আমাদের কাছে লাভজনক, এমনটি জানালেন একই গ্রামের কৃষক সবুর আলী।
আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর গ্রামের কৃষক মিজান মিয়া বলেন, তামাক চাষ জমি, মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকী এটা সত্য কিন্তু কৃষকরা কি করবে এটা ছাড়া। অন্য ফসল করে কৃষকরা লোকসান করে বলে তিনি জানান। সরকার যদি বিকল্প ফসলের ব্যবস্থা আার এটার বাজার মুল্য নিশ্চিত করে দিত তাহলে তামাকের চাষ থেকে বিরত থেকে ওই বিকল্প ফসলের দিকে ঝুকে পড়তাম, জানালেন কৃষক মিজান।
লালমনিরহাট সদরে বড়বাড়ী এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, মাঠ পর্যায়ে তামাক কোম্পানীর পদচারনা, কৃষকদের কার্ড দেয়া, সহজ কিন্তিতে ঋণ দেয়া আর স্বাস্থ্য চিকিৎসায় অংম গ্রনন করা বন্ধ করতে পারলে কৃষকরা অনেকটাই এ নেশা চাষ থেকে বিরত থাকবে। আমরা কৃষক চুপ থাকলেও কোম্পানীগুলোর সরব দর্শন আমাদের জাগিয়ে তোলে নেশা চাষে। আর বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় আমরা বাধ্য হয়েই নেশা চাষে ঝাপিয়ে পড়ি পরিবার পরিজন নিয়ে, তিনি এমনটি জানিয়ে বলেন তামাক চাষের কারনে পরিবারের লোকজন প্রায়ই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন নিয়মিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তামাক কোম্পানীর এক কর্মচারী বলেন, সরকারীভাবে তামাক কোম্পানীগুলো কঠোরতার সাথে নিয়ন্ত্রন করলে তামাক চাষ হ্রাস পাবে। আর বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে লালমনিরহাটে তামাক ছাড়া কৃষকরা আর কিছুই বুঝবে না আর এজন্য এ অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতি ব্যাপকভাবে জেগে উঠবে। চাকুরী করার সুবাদে তারা প্রতিনিয়ত কৃষকদের দ্বারগোড়ায় গিয়ে তামাক চাষে তাদের উদ্বুদ্ধ করে থাকি আর এজন্য তাদেরকে বিনামুল্যে বীজ, এমনকি সার, কীটনাশকসহ সহজ কিস্তিতে ঋণের ব্যবস্থা ও তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি।
লালমনিরহাট খামার বাড়ীর উপ-পরিচালক সাফায়েত হোসেন লালমনিরহাটে তামাক চাষের ব্যাপকতা স্বীকার করে বলেন তামাক কোম্পানীগুলো এজন্য দায়ী। তামাক কোম্পানীগুলো নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ চরতিার্থ করতে অবলা কৃষকদের আকর্ষনিয় লোভে প্রলুদ্ধ করে ফুলিয়ে ফাপিয়ে তামাক চাষে সম্পৃক্ত করছে আর হত্যা করছে কৃষি জমিকে। এক্ষুনি সরকারীভাবে বিকল্প ফসল ও বাজার ব্যবস্থাসহ পয়োজনী পদক্ষেপ গৃহিত না হলে তামাক চাণ নিয়ন্ত্রন অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্তব্য চালু নেই