লামায় পার্বত্য মন্ত্রানালয়ের বিশেষ কর্মসূচী বাস্তবায়নে দুর্নীতি ॥ জনমনে ক্ষোভ

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আপদকালীন খাদ্য শস্যের বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের কারণে অভিযোগ উঠেছে লামা উপজেলায়। প্রকল্প এলাকার জনসাধারণের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। অপরদিকে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন বাধা গ্রস্ত হচ্ছে।
জানা গেছে চলতি ১৪-১৫ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আওতায় লামা উপজেলার সরই ও গজালিয়া ইউনিয়নে ২১টি প্রকল্পের অনুকূলে ২০০ মেঃটন খাদ্য শস্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তার মধ্যে সরই ইউনিয়নে ১১টি প্রকল্পের অনুকূলে ১০০ মেঃটন এবং গজালিয়া ইউনিয়নে ১০টি প্রকল্পের অনুকুলে ১০০ মেঃটন। সরই ইউনিয়নের প্রকল্প গুলো হচ্ছে চিংহ্লামং পাড়া কেয়াং ঘরের উন্নয়ন ৫মেঃটন, ক্যাজু হেডম্যান পাড়া গীর্জার উন্নয়ন ৫মেঃটন, সরই নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আসবার পত্র সরবরাহ ১০ মেঃটন, ফরিদ মেম্বার ফোরকানীয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন ১০মেঃটন, ফাতেমা দরগার পানজ খানার উন্নয়ন ১০মেঃটন, কমোপনিয়া বাছড়ি কালভাটের সাইট ভরাট ও রাস্তা সংস্কার ১০মেঃটন, গয়ালমারা মুখ হতে রউফেরমার বাড়ীর দিকে রাস্তা সংস্কার ১০মেঃটন, আমতলী হতে ডুমবুরুর দিকের রাস্তা সংস্কার ১০মেঃটন, ডিসি রোড করিমের বাড়ী হতে দেরাজপাড়া বিদ্যালয় রাস্তা সংস্কার ১০ মেঃটন, কেন্দার দোকান হতে পাইসাপ্রু পাড়ার রাস্তা সংস্কার ১০ মেঃটন, মেরেত্তার উঠনী কমিউনিটি ক্লিনিকের মাঠ উন্নয়ন ১০ মেঃটন।

গজাালিয়া ইউনিয়নের প্রকল্প গুলো হল ব্রিকফিল্ড জামে মসজিদের উন্নয়ন ১০ মেঃটন, বদুছড়াপাড়া হতে প্রংগপাড়া যাওয়ার রাস্তা উন্নয়ন ১০ মেঃটন, গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আসবারপত্র সরবরাহ ১০ মেঃটন, তারার ঝিরি জামে মসজিদের উন্নয়ন ১০ মেঃটন, নাজিরাম পাড়া আসাথাই সমিতির আসবারপত্র সরবরাহ ১০ মেঃটন, হ্লাচিং পাড়া বৌদ্ধ বিহারের উন্নয়ন ১০ মেঃটন, বাইশপাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্রের কমিউনিটি সেন্টারের আসবারপত্র সরবকরাহ ১০ মেঃটন, তুলাতলী বৌদ্ধ বিহারের উন্নয়ন ১০ মেঃটন ও লুলাইংমুখ বাজারে মুরুং সমিতির আসবারপত্র সরবরাহ ১০ মেঃটন। এলাকার খাদ্য সমস্যা দুিরকরণ ও আর্থ সামাজিক উন্নযনের জন্য এসকল খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মর্মে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রনালয়ের সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগে জানা গেছে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের গায়ে অপবাদ লেপনের উদ্দেশ্যে মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দকৃত খাদ্য শস্যের প্রকল্পে পরিকল্পিত ভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হচ্ছে।

স্থানীয় জনসাধারণ ও প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা জানিয়েছেন গৃহীত কোন প্রকল্পের কত মেঃটন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা গোপন রাখা হয়েছে। বরাদ্দকৃত খাদ্য শস্য কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে যে কারণে একদিকে এলাকায় দেখা দিয়েছে কর্মসংস্থানের সংকট অন্যদিকে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে সরকারের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া। সরই ইউনিয়নের ফাতেমা দরগার পানজ খানার উন্নয়ন ১০মেঃটন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়। উক্ত প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শনে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন চেযারম্যান মোঃ ছবুর মেম্বার জানিয়েছেন খাদ্য বিক্রি ৫০ হাজার টাকা তার হাতে আছে। সরই ইউ.পি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম একই প্রকল্পের বিষয়ে জানান খাদ্য শস্য বিক্রি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে একাউন্টে আছে।

গয়াল মারা মুখ হতে রউফেরমার বাড়ির দিকে রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের চেয়ারম্যান ১০ মেঃটন খাদ্য শস্যের পুরোটাই লুপাট করেছেন। স্থানীয় অধিবাসি রহিমা বেগম, ফজর আলী, মোঃ জাকির হোসেন জানান, এই প্রকল্পের বিষয়ে স্থানীয় জনগণ অবগত নয়। এভাবে প্রত্যেকটি প্রকল্পের একই চিত্র। স্থানীয়রা অভিযোগ করে আরো জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং খামখেয়ালী পনার কারণে সরকারী উন্নয়ন প্রকল্পের এই বেহাল দশা। সরকারী কর্মকর্তাদের ও প্রকল্প চেয়ারম্যানদের এই জাতিয় দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমুর্তি লাটে উঠছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়ার তো দুরের কথা অধিকাংম প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি বলে জানা গেছে।

গজালিয়া ইউনিয়নের তারার ঝিরি জামে মসজিদের উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে মসজিদের মুসল্লি আশিকুর ইসলাম, আকরাম হোসেন, মোঃ ফারুক জানান, ১০ মেঃটন খাদ্য শস্য বাবদ স্থানীয় চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মার্মা দুই কিস্তিতে তাদের ১৫ হাজার টাকা দিয়েছে। বাইশপাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্রের কমিউনিটি সেন্টারের আসবারপত্র সরবরাহ ১০ মেঃটনের বরাদ্দকৃত এ প্রকল্প পরিদর্শনে পাড়া কারবারী মংচিহ্লা মার্মা ও ক্যয়ছা মার্মা জানান স্থানীয় ইউ.পি চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মার্মা ২০টি প্লাস্টিক চেয়ার ও ১টি প্লাস্টিক টেবিল দিয়েছেন। সরেজমিনে পরিদর্শনে অধিকাংশ প্রকল্পের বাস্তবায়নের হদিস মেলেনি।
লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মোঃ ফিজানুর রহমান জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার বিসয়ে আমার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামসুন নাহার সুমি মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে সাংবাদিকদের কেন তথ্য দিতে হবে ? জনগণ আপনাদের কাছে কেন আসে ? আমার কাছেতো কেহ কোন অভিযোগ দেয়নি। আমি এই বিষয়ে আপনাদের সাথে কথা বলবো না।



মন্তব্য চালু নেই