লক্ষ্মীপুরে সুরতহাল রিপোর্টে আঁখিকে নির্যাতনের চিহ্ন

রায়পুর উপজেলার চরলক্ষী গ্রামের দিনমজুর আলমগীর হালদারের মেয়ে আঁখি। সে তার দিনমুজর বাবার সংসারে হাল ধরতে চেয়েছিল। শিশুকাল থেকে বাবার সঙ্গেই গ্রামের চরের মানুষের জমিতে সহযোগী হিসেবে কাজ করতো আঁখি। বাবার সঙ্গে অন্যের জমিতে কাজ করার পরও এক বেলা খেয়েও অন্য বেলায় না খেয়ে দিন কেটে যায় তার। বয়স যখন ১২ বছর তখন ফুফুর মাধ্যমে ঢাকার মিরপুরের সেনাকর্মকর্তার বাসায় কাজ করার প্রস্তাব আসে। এমন প্রস্তাব শুনে দিনমজুর বাবা ও মা মেয়েকে বুঝিয়ে (অব.) সেনা কর্মকর্তার বাসার কাজে পাঠান।

মেয়েটিও খুব খুশি নতুন জামাকাপড় ও তিন বেলা পেট ভরে খাবার পাবে এই আশায়। মাস শেষে বাবার হাতে কিছু টাকাও তুলে দিতে পারবে আঁখি। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই সোমবার দুপুরে আঁখির বাবা- মায়ের কাছে খবর আসে ওই কর্মকর্তার বাসার টয়লেটে পড়ে আঁখি মারা গেছে। এ ঘটনার পর রাত ২টায় সেনা কর্মকর্তার ছোট ভাই সবুজ একজন অ্যাডভোকেট কে নিয়ে নিহত কিশোরীর লাশ তার গ্রামের বাড়ি চরবংশীতে রেখে চলে যায়। মৃত আঁখির শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে ১২ই মে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে রায়পুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

দুপুরে হাজিমারা ফাঁড়ি থানার ইনচার্জ এসআই সিরাজ সুরতহাল প্রতিবেদনের পর লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, নিহত কিশোরীর গলায় হাতের ছাপ, পা ও মুখসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অভিভাবক ও

স্থানীয়দের ধারণা, কিশোরীকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি। নিহত কিশোরীর পিতা আলমগীর হাওলাদার জানান, প্রায় দেড় বছর আগে তার চাচাত বোনের মাধ্যমে আঁখিকে সেনাকর্মকর্তার ঢাকার মিরপুরের বাসায় কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সে ২ বার বাড়িতে বেড়াতে আসে। বিভিন্ন সময় মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে দেখা করতে দেয়া হতো না।

সোমবার আঁখি টয়লেটে পড়ে মারা গেছে বলে সেনাকর্মকর্তার পরিবার থেকে জানানো হয়। রাত ২টায় মেয়েটির লাশ বাড়িতে রেখে সেনাকর্মকর্তা চলে যায়। মৃত আঁখির শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে বুঝা যায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তার পরিবার তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।

এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে থানার ওসি জানান, ময়নাতদন্তে রিপোর্ট এলে তখন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মঙ্গলবার রাতেই আঁখির মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে তার নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে মেয়ের শোকে বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে এবং এলাকায় শোকের ছায়া বইছে। এ ঘটনায় সেনাকর্মকর্তার ভাই সবুজ জানান, মেয়েটি বাসার টয়লেটে পড়ে মারা গেছে। তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়নি বলে (অব.) মেজর বা তার পরিবার জানায়।

রায়পুর থানার ওসি আবদুল্লা আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল ঢাকার মিরপুর থানা এলাকা হওয়ায় আমরা কোন আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারছি না। লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই