অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম

‘র‌্যাব-পুলিশের নামে অভিযোগ এলেই মামলা-জেল নয়’

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা বা তাদেরকে কারাগারে পাঠানো ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় র‌্যাব হেফাজতে ‘নির‌্যাতনে’ শাহনূর আলম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ এনে হাই কোর্টে তার ভাইয়ের করা আবেদনের শুনানিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “অভিযোগ পাওয়া গেলেই যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা হয়, এর বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে যদি আত্মসমর্পণ করতে হয় তাহলে র‌্যাব বা পুলিশের কেউ কাজ করবে না। দেশ অকার‌্যকর হয়ে যাবে।”

আবেদনকারী মেহেদী হাসানের অভিযোগ, গত ২৯ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে র‌্যাবের লোকজন নবীনগর থেকে শাহ নূরকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন আবু তাহের মিয়া নামে এক ব্যক্তির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

“হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার উপর নির্যাতন করা হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ৬ মে তার মৃত্যু হয়।’

মেহেদী র‌্যার্বের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা না নেয়ায় ১ জুন তিনি হাকিম আদালতে অভিযোগ করেন। মেহেদীর আবেদনে হাকিম ওই অভিযোগকে মামলা হিসাবে গ্রহণের জন্য থানাকে নির্দেশ দিলে পরে এক র‌্যাব সদস্যের আবেদনে তা সংশোধন করে দেয় দায়রা আদালত।

এরপর মেহেদী হাই কোর্টে আবেদন করেন। হাই কোর্টে তাদের আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, আত্মসমর্পণ করা ছাড়া ওই র‌্যাব সদস্য দায়রা আদালতে কোনো ফৌজদারি আবেদন করতে পারেন না। করতে হলে তাদের প্রথমে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

শুনানিতে এর জবাব দেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, “দায়রা আদালত ভুল আদেশটা কোথায় দিয়েছে? ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বলেছে, অভিযোগকেই মামলা হিসাবে গ্রহণ করতে। আর দায়রা আদালত বলেছে, আগে তদন্ত করো। তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নাও। তখন মামলা হওয়ার মতো কিছু পাওয়া গেলে মামলা হবে।”

এ সময় আদালত বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আইন কর্মকর্তা (পিপি) আবেদন করতে পারতেন।

র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আবেদন কোনো সমস্যা নয় মন্তব্য করে মাহবুবে আলম বলেন, কেউ আবেদন না করলেও আদালত আদেশ দিতে পারেন। তাই এখানে আইন বহির্ভূত কিছু হয়নি।

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের আদেশের দিকে ইঙ্গিত করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “একটি আদালত উৎসাহী হয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তারে আদেশ দিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় এসব আদেশ আসছে।

“আমরা বিশেষ পরিস্থিতিতে তখন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাইনি। তার অর্থ এই নয় যে, যে কেউ অভিযোগ করলেই অভিযুক্তদের কারাগারে যেতে হবে।”

মাহবুবে আলম বলেন, আইন অনুযায়ী অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্ত হবে। এরপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।

“কিন্তু এখানে আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বিচার তো হয়েছে… এসি আকরামের মতো মেধাবী কর্মকর্তা এখনও জেলে।”

শুনানির পর আদালত রুল দিয়ে বিষয়টি পরীক্ষা করতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। মানুষ মনে করবে, র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে রুল হয়েছে।”

দায়রা আদালতের আদেশে তদন্ত চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে কিছু পাওয়া গেলে এমনিতেই এদের বিচার হবে। তাই হাই কোর্টে আবেদন খারিজ হওয়া উচিৎ।

আদালত এ পর্যায়ে বলেন, এটা কারো বিরুদ্ধে রুল নয়। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার জন্য রুল দেয়া হচ্ছে।

এরপর দায়রা আদালতের বদলে দেয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট।



মন্তব্য চালু নেই