র্যাব গোয়েন্দা প্রধানকে বাঁচানো গেল না

র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে (৪৬) বাঁচানো গেল না। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছেন। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে র্যাব সদর দফতর।
র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান জানান, লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ রাত ১২টা ৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়। আজাদের মৃতদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ তার জানাজা ও দাফনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। মৃত্যুর সময় আজাদের পাশে ছিলেন র্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, পরিবারের সদস্য, কোর্সমেট ও বন্ধুবান্ধবরা।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আজাদের মৃত্যুতে র্যাবের অপূরণীয় ক্ষতি হল। তিনি জাতির সূর্যসন্তান ছিলেন। র্যাব তথা দেশের মানুষ তাকে আজীবন স্মরণ করবে। আবুল কালাম আজাদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশে শান্তি-স্থিতিশিলতা ও আইনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে গেছেন। জঙ্গিসংক্রান্ত অপরাধ দমনে তার উলেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। দেশ মাতৃকার এ অকুতোভয় সৈনিক দেশের কল্যাণে তার নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন। একজন গর্বিত সেনা কর্মকর্তা হিসেবে এটি তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
আজাদের দীর্ঘদিনের সহকর্মী র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বর্তমানে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)-এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান এক প্রতিক্রিয়ায় যুগান্তরকে বলেন, কর্নেল আজাদ ছিলেন খুব সাহসী একজন কমান্ডো অফিসার। তার মৃত্যুতে শুধু র্যাব নয়, দেশ একজন অকুতোভয় বীর সেনানীকে হারাল। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র্যাবে থাকাকালীন কর্নেল আজাদ র্যাবের গোয়েন্দা শাখাকে উৎকর্ষতার চরম শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার ব্যক্তিগত তৎপরতার কারণে অনেক বড় বড় অভিযানে দ্রুত সফলতা লাভ করে র্যাব।
কর্নেল আজাদ তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তানকে রেখে গেছেন। ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সদালাপী ও সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত কর্নেল আজাদ বন্ধু সহকর্মী ছাড়াও গণমাধ্যমকর্মী, বিশেষ করে অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদকদের অত্যন্ত আপনজন ছিলেন। যে কোনো অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে সহায়তা চাইলে তিনি হাস্যোজ্জ্বল মুখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। এ কারণে গণমাধ্যমকর্মীরা তার জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করে আসছিলেন।
২৫ মার্চ সিলেটের শিববাড়ীর আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে জঙ্গিদের ফেলে রাখা বোমার বিস্ফোরণে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ গুরুতর আহত হন। বিস্ফোরিত বোমার একটি স্পিন্টার লে. কর্নেল আজাদের এক চোখ দিয়ে ঢুকে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। ওই দিন রাতেই হেলিকপ্টারে তাকে সিলেট থেকে ঢাকার সিএমএইচে আনা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৬ মার্চ রাত ৮টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুরের প্যারাগন মেডিকেল সেন্টারের নিউরো বিশেষজ্ঞ ডা. ম্যাথিউর নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফেরত এনে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মনকষা গ্রামে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদের বাড়ি। ৩৪তম বিএমএ লং কোর্সে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন কর্মকর্তা। ২০০৫ সালে তিনি সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে প্যারাট্রুপারে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্যারা কমান্ডো হিসেবে উত্তীর্ণ হন। ২০১১ সালের দিকে মেজর আজাদ র্যাবের গোয়েন্দা শাখার উপপরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তিনি লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি নিয়ে গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন বিশেষ করে জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ ও হিযবুত তাহরিরের সদস্যদের গ্রেফতারের ব্যাপারে লে. কর্নেল আজাদের অবদান রয়েছে। জঙ্গিবাদ এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার জন্য বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ পদক) এবং পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পদক) পুরস্কারে ভূষিত হন লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ।
মন্তব্য চালু নেই