রোহিঙ্গা ইস্যুতে নয়াদিল্লি ও বেইজিংকে পাশে চায় ঢাকা
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের কারণে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যার মধ্যে গত দুই মাসেই প্রায় ৭০ হাজার শরণার্থী অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে বাংলাদেশের একাধিক অঞ্চলের নিরাপত্তাব্যবস্থা, আর্থ-সামজিক অবস্থা এবং পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈশ্বিক সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে এই ইস্যুতে ঢাকার দুই বন্ধু নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের সরব ভূমিকা দেখতে চায় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে এই দুই রাষ্ট্রের সরব সাড়া পেতে বিশেষ কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের কারণে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বসবাস করছে। এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বেশির ভাগই কক্সবাজার জেলার দুইটি আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। তবে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গত দুই মাসের ব্যবধানে আরো প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে প্রবেশ করেছে। তারা এখন ভাসমান আশ্রয়শিবিরে রয়েছে। বেঁচে থাকার তাগিদে এদের মধ্যে অনেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি এই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলায় এখন ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। তাদের কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতি থেকে শুরু করে সব বিষয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
মিয়ানমারের জাতিগত নিপীড়নের কারণে সৃষ্টি হওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে বৈশ্বিক সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। ইউরোপ, আমেরিকা থেকে শুরু করে আরব বিশ্ব এবং এশিয়ার নেতৃবৃন্দ এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বৈশ্বিক নেতারা এই ইস্যুতে ইতিমধ্যে মিয়ানমার সরকারের সমালোচনা করেছে। তবে এই ইস্যুতে দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সরব ভূমিকা দেখতে চায় বাংলাদেশ। ঢাকা চায় নয়াদিল্লি এবং বেইজিং ন্যায্য কথা বলুক। কেননা এই দুটি দেশই বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী। নয়াদিল্লি এবং বেইজিং যাতে এই ইস্যুতে সরবভাবে ন্যায্যা কথা বলে, এ জন্য বিশেষ কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে ঢাকা। পাশাপাশি ঢাকা থেকে ওই দুটি দেশের মিশনগুলোতে এ বিষয়ে বিশেষ বার্তাও পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কক্সকাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে। তাদের কারণে ওই অঞ্চলের অর্থনীতি থেকে শুরু করে সব কর্মকাণ্ডেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে বিশ্বের সব রাষ্ট্রের কাছে সমর্থন চাওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বৈশ্বিক সংস্থাগুলো এবং সব রাষ্ট্রই এই ইস্যুতে সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছে।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ এই প্রতিবেদককে বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ও ভারত, চীন ও মিয়ানমার- এই চারটি রাষ্ট্র এ অঞ্চলের খুবই নিকটতম প্রতিবেশী। তাই বাংলাদেশ চায় চীন ও ভারত এ বিষয়ের সমাধানে সরব ভূমিকা পালন করুক। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, আঞ্চলিক রাজনীতি এবং বৈশ্বিক রাজনীতির কারণে এই ইস্যুতে ওই দুটি দেশ এখনো বাংলাদেশের পক্ষে কোনো সাড়া বা সহানুভূতি দেখায়নি।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীবিষয়ক সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের হাতে। তাই এ বিষয়ের অর্থবহ সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু ইইউ সব সময়েই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শরণার্থী নিপীড়নের তথ্য ইইউ সব সময়ই বৈশ্বিক বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থাপন করে থাকে। বাংলাদেশে বিরাজমান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যার সমাধানেও সংস্থাটি আন্তরিক।
ভারতের ঢাকা মিশনের একাধিক কূটনীতিকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী নির্মূলে বাংলাদেশের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। এ জন্য নয়াদিল্লি ঢাকাকে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছে। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে নয়াদিল্লি সরাসরি ঢাকার প্রতি সরব সমর্থন বা সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারছে না।
মন্তব্য চালু নেই