রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ঠেঙ্গারচরেই : প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কে কী বললো না বললো তা শোনা যাবে না। ঠেঙ্গারচর আমাদের রাষ্ট্রেরই একটি অংশ। সুতরাং সেখানে পুনর্বাসন করলে ক্ষতি কী?

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাতারা রোহিঙ্গাদের জন্য কীভাবে সহযোগিতা করবে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন। দাতাদের সহযোগিতা পেলে ঠেঙ্গারচরেই রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত বাড়ি-ঘর তৈরি করে দেয়া হবে।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনির্ধারিত এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। মন্ত্রিপরিষদের একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, তিনদিনের জার্মানি সফরকালে দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় মার্কেল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি তুলে ধরেন। হাতিয়ার দ্বীপ ঠেঙ্গারচর মানুষের বসবাসের উপযুক্ত কিনা সে বিষয়ে তিনি শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কেল তাকে আরও বলেন, ওই দ্বীপে নাকি পানি ওঠে, বসবাসের উপযুক্ত নয়। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু অনুযায়ী অনেক এলাকা অনেক সময় পানিতে তলিয়ে যায়। সেখানকার মানুষ সব দুর্যোগ মোকাবেলা করেই বসবাস করছে। আমাদের দেশের জলবায়ু এমনই।

এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় ঠেঙ্গারচর নিয়ে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। তবে অধিকাংশ পত্রপত্রিকার খবরে বলা হয়, ঠেঙ্গারচর বসবাসের উপযুক্ত স্থান নয়। কয়েকটি প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় ঠেঙ্গারচরের ছবিও ছাপা হয়েছে। যে কারণে ঠেঙ্গারচর নিয়ে কয়েকদিন ধরেই মানুষ নানাভাবে আলাপ-আলোচনা করছে।

এদিকে কেউ কেউ বলছেন, ঠেঙ্গারচরে পুনর্বাসনের কথা শুনে অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত গেছে।

গত কয়েক মাস ধরে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ও গাছ উজাড় করে বসতি স্থাপন করেছে। এসব এলাকায় তাদের বসবাস নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, কিছু প্রভাবশালী আছেন, যারা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করলে লাভবান হন। এই প্রভাবশালীরা বনভূমি দখল করে ঝুপড়ি তৈরি করে রোহিঙ্গাদের ভাড়া দেন। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেন। ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ’ সীমান্তের স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর কাছে অর্থ আয়ের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ দুই কারণে সীমান্তে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি কড়া পাহারা দিয়েও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছে না। আপাতত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে অসহায় মানুষগুলোকে আশ্রয় দেয়ার এ প্রবণতা কক্সবাজারবাসীর জীবনযাত্রাকে ইতোমধ্যে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।



মন্তব্য চালু নেই