খাদ্যে বিষক্রিয়ায় ৪ জনের মৃত্যু

রোগিদের বমি খেয়ে মরছে কুকুর, হাঁস-মুরগিও

ময়মনসিংহ’র ত্রিশাল উপজেলার বাদামিয়া গ্রামে বিষাক্ত খাবার খেয়ে দুই সহোদর শিশুসহ ৪ জন মারা যাওয়ার ঘটনায় আহতদের করা বমি খেয়ে ওই বাড়ির আশপাশের কুকুর, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা যাচ্ছে।

খাদ্যে এতোটাই বিষ ছিল যে, বৃহস্পতিবার এ ঘটনার পর থেকে একটি কুকুর মারা গেছে। সেইসঙ্গে মারা গেছে ওই বাড়িসহ আশপাশের বাড়ির হাঁস-মুরগিও।

নিহতদের প্রতিবেশী সরকার বাড়ির আব্দুল মজিদের স্ত্রী আমেনা বেগম জানান, হাঁস-মুরগি কালামের ঘরের পাশ থেকে ঘুরে আসার পর পরই দাবরিয়ে অস্থির হয়ে মরে যাচ্ছে। প্রথমে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন নি।

অন্যদিকে একই বাড়ির আ. সালামের স্ত্রী মুর্শিদা আক্তার জানান, অসুস্থদের বমি খাওয়ার পর একটি কুকুর তাৎক্ষণিক ওই বাড়িতেই মারা গেছে। এছাড়া একই কথা বলছেন অন্য প্রতিবেশীরাও।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ীয় ইউনিয়নের বাদামিয়া গ্রামের ছমির উদ্দিন সরকার বাড়ির আবুল কালামের বাড়িতে সকাল ৯টার দিকে মিষ্টি আলু ও আটার রুটি দিয়ে নাস্তা করেন পরিবারের সদস্যরা। মিষ্টি আলু ও রুটি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সকলে অসুস্থ্যতা অনুভব করে।

একপর্যায়ে বেশ কয়েক জন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পাশের ঘরের লোকজন তাদের তেতুল, বড়ই ও টক জাতীয় খাবার খাওয়ান। অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদেরকে দ্রুত ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ও পরে সেখান থেকে সরাসরি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

ভর্তির কিছুক্ষণ পর ওই বাড়িতে বেড়াতে আসা উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের ইব্রাহীম খলিল মিয়ার মেয়ে দিলরুবা আক্তার শাপলা (৯) ও মো. শহিদুল ইসলামের মেয়ে বিথি আক্তার (৭) মারা যায়।

বেলা ১২টার দিকে আবুল কালামের মেয়ে বাদামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাজমা আক্তার (১৩) মারা যায়। বিকেল পৌঁনে ৫টায় মৃত্যু হয় কালামের শাশুড়ি বাদামিয়া হিংরাপাড়া গ্রামের মৃত হাতেম আলীর স্ত্রী শমেলা বেগম (৬৫)।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হানিফ মোহাম্মদ জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আহতদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, যে দোকান থেকে আটা কিনে এনেছিল ওই বাড়ির লোকজন সেই দোকানের মালিক সাইফুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে একই দিনে অস্বাভাবিকভাবে এতোগুলো মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পরিবারের অন্য সদস্যরা। নিহত বাদামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী নাজমার বিদ্যালয়ে সহপাঠিদের কান্না ধরে রাখতে পারছেনা অবুঝ শিশুরাও।



মন্তব্য চালু নেই