রোগা হওয়ার নতুন উপায় প্রায় হাতের মুঠোয়
দুনিয়ায় মোটা মানুষদের বড় সমস্যা৷ ভোজনরসিক বা আরামপ্রিয় হলে তো কথাই নেই৷ কিন্তু শুধু কম খেয়ে বা ব্যায়াম করেই কি মেদ কমানো সম্ভব? জার্মান বিজ্ঞানীরা এবার এমন ওষুধ খুঁজছেন, যা অভিনব উপায়ে মেদ কমাতে সাহায্য করবে৷
বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষেরই ওজন মাত্রাধিক৷ জার্মানিতে তো সাবালকদের প্রায় অর্ধেকই বেশ মোটা৷ তাদের মধ্যে আবার পুরুষদের সংখ্যা বেশি৷ সত্যি, বিনা পরিশ্রমে কোমরের মেদ ঝরে পড়লে কী ভালোই না হতো!
শরীরের অপ্রয়োজনীয় মেদ কীভাবে দূর করা যায়, বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি ও টক্সিকোলজি বিভাগের অধ্যাপক আলেক্সান্ডার ফাইফার-এর নেতৃত্বে এক গবেষক দল তা জানার চেষ্টা করছেন৷ প্রথমেই যা জানা গেছে, তা হলো সব মেদ সমান নয়৷ ফাইফার বলেন, ‘‘বাদামি ও সাদা – দুই রকমের মেদের কোষ রয়েছে৷ সাদা মেদের কোষেই শরীরের শক্তি ধারণ করার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি৷ অন্যদিকে বাদামি মেদের কোষ চুলার মতো ‘ফ্যাট বার্নিং’-এ সাহায্য করে৷”
পেট, পা ও নিতম্বের বাড়তি ওজনের উৎস আসলে সাদা মেদ৷ সাদা মেদের কোষের আকার তুলনামূলকভাবে বড়৷ তার মধ্যে রয়েছে একটি মাত্র মেদের বিন্দু, যা শরীরের অপ্রয়োজনীয় শক্তি ধারণ করে৷ শরীরের ওজনের প্রায় এক পঞ্চমাংশই হলো এই ‘হোয়াইট ফ্যাট’৷ তার মাত্রা বাড়লেই সমস্যা দেখা দেয়৷ ফাইফার বলেন, ‘‘শরীরে খুব বেশি এনার্জি জমা হলেই সাদা মেদ কোষ আরও মোটা হয়ে যায়, হোয়াইট ফ্যাট-এর আয়তন বেড়ে যায়৷ তখন ওজনও বেড়ে যায়৷ সমস্যা হলো, হোয়াইট ফ্যাট তখন প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন রোগের জন্ম দেয় – যেমন ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক৷ এমনকি কয়েক ধরনের ক্যানসারও অতিরিক্ত মেদ ও ওজনের সঙ্গে জড়িত৷”
অন্যদিকে বাদামি অ্যাডিপোজ টিস্যুর মধ্যে মেদের অনেক ছোট বিন্দু রয়েছে৷ সেটি ‘এনার্জি বার্নিং’ করে শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখে৷ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ঘাড় ও কাঁধে প্রায় ৫০ শতাংশ বাদামি মেদ থাকে৷
শরীরের ঠিক কোন অণু বাদামি মেদ ‘অ্যাক্টিভেট’ করে, বন শহরের বিজ্ঞানীরা সেটি আবিষ্কার করেছেন৷ অ্যাডেনোসিন নামের সেমিওকেমিক্যাল বাদামি মেদের কোষ-এর রিসেপ্টরে ডকিং করে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া তরান্বিত করে৷
ইঁদুরদের ক্ষেত্রে এমনটা করলে তাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়৷ ফাইফার বলেন, ‘‘অ্যাডেনোসিন ব্রাউন ফ্যাট-এর ক্ষেত্রে ঠিক কী ভূমিকা পালন করে, তা জানতে আমরা ইঁদুরের অ্যাডেনোসিন-এর রিসেপ্টর ধ্বংস করে দিয়েছিলাম৷ ফলে দেখা যাচ্ছে, রিসেপ্টর-হীন ইঁদুরদের শরীর অনেক শীতল৷ এটা একটা ইনফ্রারেড ছবি৷ যে ইঁদুরের রিসেপ্টর অক্ষত রয়েছে, যার অ্যাডেনোসিন-ও স্বাভাবিক – সেই ইঁদুরটি সহজেই বাদামি মেদ অ্যাক্টিভেট করতে পারছে৷ তার ক্ষেত্রে সাদা দাগ দেখা যাচ্ছে৷ এই অংশটি অত্যন্ত গরম, কারণ এই ইঁদুরটির বাদামি মেদ অ্যাক্টিভেট করা হয়েছে৷”
গবেষকরা এটাও জানতে চেয়েছেন, যে সাদা মেদের কোষ বাদামি মেদের কোষে পরিণত করা যায় কি না৷ অর্থাৎ, এভাবে হোয়াইট ফ্যাট বার্ন করে রোগা হওয়া যায় কিনা৷
আসলে হোয়াইট ফ্যাট সাধারণত অ্যাক্টিভেট করা যায় না, কারণ তার মধ্যে প্রয়োজনীয় অ্যাডেনোসিন রিসেপ্টর নেই৷
তবে ইঁদুরের ক্ষেত্রে অ্যাডেনোসিন রিসেপ্টরের জিন যদি তাদের সাদা মেদের কোষে ট্রান্সফার করা যায়, তখন সেটা কাজ করে৷ তখন সেগুলিও বাদামি কোষের মতো আচরণ করে৷ ফ্যাট বার্নিং বেড়ে যায়৷ ইঁদুরদের ওজন কমে৷ ফাইফার বলেন, ‘‘আমরা মেদের আধিক্য ও অস্বাভাবিক ওজনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের সন্ধান করছি৷ অ্যাডেনোসিন এক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে৷ তখন ব্রাউন ফ্যাট-কে তার শক্তি ক্ষয় করতে উদ্বুদ্ধ করা যাবে৷ সাদা মেদকেও শক্তি সঞ্চয় না করে তা খরচ করানো যেতে পারে৷”
তবে ওজন কমানোর ওষুধ তৈরি করতে ও তা সফলভাবে মানুষের উপর প্রয়োগ করতে আরও কয়েক বছর লেগে যাবে৷ ততদিন পর্যন্ত বাড়তি ওজন কমাতে খেলাধুলা করতে হবে, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে৷
মন্তব্য চালু নেই