রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঠেঙ্গারচরে পাঠাবেন না : এইচআরডব্লিউ

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নোয়াখালীর ঠেঙ্গারচরে পাঠানোর সরকারি পরিকল্পনা অবিলম্বে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডব্লিউ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই সংস্থা বুধবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, ‘বিরান’ ও ‘অনুন্নত উপকূলীয়’ এ দ্বীপে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর পরিকল্পনা ‘অসম্ভব’ ও ‘নিষ্ঠুর’। কক্সবাজার থেকে ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া হলে চলাফেরা, জীবনযাপন, খাদ্য ও শিক্ষার অধিকার থেকে এসব মানুষকে বঞ্চিত করা হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করা হবে। বাংলাদেশের এই আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৯০ থেকে বার্মায় (মিয়ানমার) নির্যাতনের শিকার হয়ে তিন থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগেরই বাংলাদেশে কোনো নিবন্ধন নেই। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেখানকার সরকারি বাহিনী হত্যা, ধর্ষণ ও বসতবাড়ি ধ্বংস শুরু করে। এ থেকে বাঁচতে প্রায় ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে।

বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউয়ের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের দ্বীপে পাঠানোর কারণ হিসেবে তাদের জীবন মানের উন্নয়নের কারণ দেখাচ্ছে। যে দ্বীপ ভরা জোয়ারের সময় পুরো প্লাবিত হয় এবং বর্ষার সময় জলমগ্ন থাকে, সেখানে তাদের পাঠিয়ে জীবন মানের উন্নয়নের দাবি হাস্যকর।’ অ্যাডামস বলেন, ‘সরকারের এই প্রস্তাব নিষ্ঠুর ও অকার্যকর। এই পরিকল্পনা বাতিল করা উচিত।’

বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে পাঠানোর পরিকল্পনা প্রথম নেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। ঠেঙ্গারচরকে বেছে নেওয়ার কারণ এটি বিরান এলাকা। এর কাছের জনবসতি হাতিয়া থেকে এর দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। এখন কক্সবাজারের যেখানে রোহিঙ্গাদের শরণার্থীশিবির আছে, সেখান থেকে এর দূরত্ব অনেক। গত বছর থেকে নতুন করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আসা শুরু হওয়ার পর সরকার আবার নতুন করে তাদের আগের পরিকল্পনায় ফিরে যায়।

ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘এই নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিকভাবে দেখতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। তবে সরকারের একারই সব দায়িত্ব নয়।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বন্যা উপদ্রুত দ্বীপে ছুড়ে না ফেলে বাংলাদেশ সরকারের উচিত তাদের জন্য দাতাদের সহায়তা চাওয়া। সেই সঙ্গে এখন যে অবস্থায় রোহিঙ্গারা আছেন, সেখান থেকে তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটানো।’

এইচআরডব্লিউয়ের এই আহ্বানের বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি ঠিক জানি না। ঠেঙ্গারচরের অবস্থা সম্পর্কেও আমি ঠিক জানি না।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, কোনো অবস্থাতেই যেন এসব মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়, সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে যে দেশ থেকে এসব শরণার্থী এসেছে, সেই দেশের সরকারের সঙ্গে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত।



মন্তব্য চালু নেই