‘রেমিট্যান্স ছাড়া সব খাতে উল্লেখযোগ্য অগগ্রতি হয়েছে’
রেমিট্যান্স আহরণে পিছিয়ে থাকলেও জনশক্তি রপ্তানি, বিদেশি বিনিয়োগ, রাজস্ব আদায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি-রপ্তানি, মাথাপিছু আয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বাকি সব খাতে উল্লেখযোগ্য অগগ্রতি হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজকর্মের বার্ষিক প্রতিবেদনে সাফল্যের এ চিত্র উঠে এসেছে।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স ছাড়া বাকি প্রায় সব সেক্টরে সরকার সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে।
বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রেমিট্যান্স ছাড়া গত অর্থবছরে বাকি সব সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অগগ্রতি হয়েছে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে কিছুটা মাইনাস আছি আমরা- মাইনাস টু পার্সেন্ট।’
সব সেক্টরে অগ্রগতি থাকলেও রেমিট্যান্সে কেন পিছিয়ে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজকের বৈঠকে অনেক বিষয়ে আলোচনা হওয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি।’
বিভিন্ন সেক্টরে সরকারের অগ্রগতি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০.১৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরে তা ছিল ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রিজার্ভ আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০.৫৫ শতাংশ বেশি।
একইভাবে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ৪২ হাজার ৯২০.৮০ মিলিয়ন ডলার। যা এর আগের বছরে ছিল ৪০ হাজার ৭০৩.৭ মিলিয়ন ডলার। আমদানি ৫.৪৫ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি আয় ৩৪ হাজার ২৫৭.১৮ মিলিয়ন ডলার। এর আগের বছরে রপ্তানি আয় ছিল ৩১ হাজার ১০২.৯৪ মিলিয়ন ডলার। আগের চেয়ে ৯.৭৭ পার্সেন্ট রপ্তানি বেড়েছে।
তিনি আরো জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আগের বছরে তা ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হলো ৮.৫৯। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে আদায় করা হয় ১ লাখ ৪৪ হাজার ১০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯.০১ শতাংশ।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় হলো ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.০৫ শতাংশ। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগগ্রতি হয়েছে। এবার বিদেশে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৭ কর্মীকে পাঠানো হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ৯.৭৭ শতাংশ বেশি।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে, জানিয়ে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, রেমিট্যান্সের পরিমাণ হলো ১৪ হাজার ৯২১.১৬ মিলিয়ন ডলার। আগের বছর ছিল ১৫ হাজার ৩১৬.৯১ মিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, এবারের অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন ও চাহিদা বেড়েছে। বিদ্যুতের সব সংস্থায় সিস্টেম লস কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ও উৎপাদন উভয় পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে। উৎপাদন ক্ষমতা ১৫.৫৯ শতাংশ বেড়েছে। লোডশেডিং কমেছে ৩১ শতাংশ। বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন সিস্টেম লস ১৩.৫৫ শতাংশ থেকে কমে ১৩.১০ শতাংশ হয়েছে। এই অর্থবছরে ৩১ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও ১৯৮ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
সচিব জানান, দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে এই অর্থবছরে ২৩.৫০ শতাংশ এবং হতদরিদ্রের হার ১২.১০ শতাংশে নেমে এসেছে। তেমনই কমেছে সামাজিক বৈষম্য।
তিনি আরো বলেন, সব মোবাইল অপারেটর কর্তৃক বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনসহ অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইপূর্বক সিম ও রিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। প্রায় ১২ কোটি ১০ লাখ গ্রাহককে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
সচিব জানান, এই অর্থবছরে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যথোপযুক্ত জীবনমান নিশ্চিত করতে সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য জুলাই ২০১৫ থেকে নতুন পে-স্কেল কার্যকর করে। সরকারি দপ্তরসমুহে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে ই-ফাইলিং পদ্ধতি ও জেলা পর্যায়ে ই-সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পরও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতু নির্মাণে ভৌত অগ্রগতি ৩৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। যা সরকারের অগ্রগতির আরেকটি বড় দৃষ্টান্ত। চার লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মূল কাজ শেষ করা হয় এই অর্থবছরে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সবক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
মন্তব্য চালু নেই