রিজার্ভ চুরির হোতারা এখন ভারতে

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে জড়িতরা ভারতে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত মূল হোতারা নিজেদেরকে আড়ালে রাখতে প্রক্সি ব্যবহার করেছেন। এই প্রক্সির মাধ্যমে তারা ইন্টারনেটে নিজের অবস্থান গোপন করে ভার্চুয়াল অবস্থান দেখিয়েছেন।

বুধবার ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে একটি বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রিজার্ভ চুরিতে জড়িতরা ভারতের কেন্দ্রে অবস্থান করছেন এবং এদের মধ্যে অনেকেই উপকূলীয় এলাকায় রয়েছেন। যে কারণে টেকনিক্যালি তাদেরকে সনাক্ত করা যাচ্ছে না।

সূত্রটি বলছে, ওই ব্যক্তিরা খুব সহজেই নিজেদের লুকিয়ে ফেলতে পারে এবং দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যেতে পারে। তবে খোয়া যাওয়া রিজার্ভের মোটা অংক উদ্ধার করা গেলেও পুরোটা সম্ভব নয়। ওই সূত্র আরো বলছে, জীবন পাড়ি দেয়ার জন্য দেড় কোটি ডলারই তাদের যথেষ্ট।

৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রিজার্ভ চুরির তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো এর বেশির ভাগ অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ওই সূত্রটি ডেইলি মেইলকে বলছে, মূল হোতাদের কখনোই খোঁজ পাওয়া যাবে না কারণ তাদেরকে সনাক্ত করা সম্ভব হবে না।

গত ফেব্রুয়ারির প্রথম শুক্রবার হ্যাকাররা এক বিলিয়ন অর্থ কয়েকটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের জন্য নিউ ইয়র্ক ফেডারেলে আবেদন পাঠায়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় রোববারের আগে পর্যন্ত অফিস বন্ধ থাকে। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মদিবস শুরু হয়, তখন বিশাল অংকের অর্থ স্থানান্তরের জন্য ফেডারেল ব্যাংকের কয়েকটি আবেদন পায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্তাব্যবস্থা সচল না থাকায়, ফ্যাক্স এবং ই-মেইলের মাধ্যমে ফেডারেল ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। কিন্তু ওইদিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ছুটি ছিল। সুতরাং এটা পরিষ্কার বিশাল এই সাইবার ডাকাতি ঘটে ফেব্রুয়ারির প্রথম সোমবার। তবে এর মধ্যেই ৩৫টি আবেদনে ৮১০ মিলিয়ন অর্থ হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। পরে ডাচ ব্যাংক বানান ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কায় ২০ মিলিয়ন অর্থ স্থানান্তরের আবেদন আটকে দেয়।

ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) চারটি অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ স্থানান্তর হয় বলে দেশটির সিনেট প্যানেল জানতে পারে। ফিলিপাইনে ব্যাংকের গোপনীয়তা আইন অত্যন্ত কঠোর এবং দেশটির ক্যাসিনোগুলোতেও সরকারি কড়া নজরদারির মধ্যে চললেও এতে সন্দেহজনক অর্থ স্থানান্তর ঠেকাতে কিংবা সরকারি কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজার্ভ চুরির তিন মাস পেরিয়ে গেছে। ফিলিপাইনের অারসিবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে ম্যানিলার কয়েকটি ক্যাসিনোতে ওই অর্থ গেলেও এখনো ধরাঁছোয়ার বাইরে রয়েছে এর মূল হোতারা। ফিলিপিনো কর্তৃপক্ষ এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি।

ম্যানিলার ব্লু রিবন কমিটি তদন্ত শুরু করলেও ধীরগতির কারণে কার্যত তা থমকে গেছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকেও (এনবিআই) এ ঘটনার তদন্তে পুরোপুরি যুক্ত করা হয়নি। গত সপ্তাহে দেশটির সিনেটে শুরু হওয়া শুনানি শেষ হয়েছে।

ফিলিপাইনের অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া আবাদ বলেছেন, কিম অং দেড় কোটি ডলার ফেরত দিয়েছে। এছাড়া আরো দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার রয়েছে ক্যাসিনো সোলায়ারে। রেমিট্যান্স কোম্পানি ফিলরেমের কাছে রয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ ডলার।

ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ অবশ্য ফিলিপাইনের ব্যাংকে পৌঁছানো ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্ধারে ম্যানিলার ওপর আস্থা রেখেছেন।

এদিকে, গত মাসে টেকনিশিয়ানদের অবহেলার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বৈশ্বিক সংগঠন সুইফট।

বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার চুরি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে বলা হচ্ছে। এ ঘটনাকে ব্যাংক হ্যাকিংয়ে সাধারণ কোনো ঘটনা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না বলে মনে করেন ম্যানিলাভিত্তিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গোয়েন্দা কর্মকর্তা অগাস্টাস এসমেরালদা।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এটি এমন একটি ঘটনা যাতে কেউ হ্যাকার ভাড়া করে অর্থ চুরি করেছেন এবং ব্যাংক, অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ব্যবস্থা, ক্যাসিনো সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝেন। লাস ভেগাসের ক্যাসিনো ডাকাতির ঘটনা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ওসানস-১১’ এর কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, এটি আধুনিক যুগের ‘ওসানস-১১’। তিনি বলেন, আমি এটিকে বলবো ‘ম্যানিলা ১২’। ম্যানিলার এই কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক দুটি ব্যাংকের হয়ে এর আগে কাজ করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই