রিজার্ভ চুরির বাকি অর্থ ফেরত দেবে না ফিলিপাইন

ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) জানিয়ে দিয়েছে, রিজার্ভের চুরি যাওয়া বাকি অর্থ ফেরত দেবে না তারা।

রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি যাওয়ার জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলাকে দায়ী করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের আর কিছুই করার নেই বলে এক বিবৃতিতে আরসিবিসি দাবি করেছে।

এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণে ফিলিপাইনের সিনেটের কাছে নতুন করে এ বিষয়ে তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ফিলিপাইনে অবস্থান করছে। এরই মধ্যে রিজাল ব্যাংক বিবৃতি দিয়েছে এবং অর্থ চুরি যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করেছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সে খবরে বলা হয়েছে, রিজাল ব্যাংকের পক্ষে তাদের আইনজীবী থিয়া দায়েপ বিবৃতি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকের অসাবধানতার কারণেই ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়েছে। এর দায় রিজাল ব্যাংক নেবে না। অর্থ আদায়ের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ অন্যায়ভাবে গণমাধ্যমের মাধ্যমে ফিলিপাইন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

থিয়া দায়েপ তার বিবৃতিতে অর্থ চুরি যাওয়ার জন্য স্পষ্টভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলাকে দায়ী করে বলেছেন, ফিলিপাইন সরকার অর্থ উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনেক সহায়তা করেছে। এখন তারা যেন স্বচ্ছতা দেখায়, আমরা সে আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংককেই খুঁজে বের করতে হবে, কারা এ অর্থ চুরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে কোনো অর্থ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। এর চেয়ে চুরির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তের ফল প্রকাশ করা উচিত।

এ অবস্থায় রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে হ্যাকাররা। এ অর্থ ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে জমা হয় এবং সেখান থেকে উত্তোন হয়। বিশ্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে তোড়পাড় সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের প্রচেষ্টা ও ফিলিপাইন সরকারের তৎপরতায় দেড় কোটি ডলার ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাকি অর্থ উদ্ধার হয়নি।

প্রায় সাড়ে কোটি ডলার উদ্ধারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ফিলিপাইনে যাওয়ার পর রিজাল ব্যাংক তাদের সুর পাল্টে ফেলেছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার ফিলিপাইনের সংবাদপত্র ইনকোয়ারার-কে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে ফিলিপাইন সরকারের কাছে অনুরোধ জানাতে আমরা এখানে এসেছি।’

সোমবার ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র আর্নেস্তো অ্যাবেলা জানিয়েছেন, অর্থ ফেরত দেওয়া নিয়ে প্রেসিডেন্টের ওপর তাক্ষণিক মনযোগ দেওয়ার চাপ আসতে পারে বলে তা বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে, রিজাল ব্যাংকের দায় এড়ানোকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন আইনমন্ত্রী হক। তিনি বলেছেন, এর দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই তাদের। কারণ অবৈধ লেনদেনের অপরাধে তারা ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ২ কোটি ডলার জমিরানা দিয়েছে। আর তারা যেহেতু দায় স্বীকার করেছে, আমরা ফিলিপাইন সরকারের মাধ্যমে বাকি অর্থ ফেরত চাইছি।

ইনকোয়ারার-কে আইনমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘রিজাল ব্যাংকের বিবৃতি প্রাসঙ্গিক নয়। আমরা যে দাবি করছি, তার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র নেই। রিজাল ব্যাংক অর্থ গ্রহণ করেছে, এটি প্রমাণিত। ফলে তারা দায় এড়াতে পারে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘অর্থ যেহেতু এখানে এসেছে, সেহেতু এটি পরিষ্কার, এ দেশের কিছু মানুষ এর সঙ্গে বৃহৎ পরিসরে জড়িত।’

আইনমন্ত্রী ছাড়া ফিলিপাইনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন অর্থমন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে করিব। তারা ফিলিপাইনের সিনেটের প্রেসিডেন্ট অ্যাকুইলিনো ‘কোকো’ পিমেন্টেল এবং দেশটির অর্থ ও বিচার মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠ করেছেন।

অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইন সরকার সহযোগিতা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।



মন্তব্য চালু নেই