রাস্তা বানাতে সর্বোচ্চ ব্যয় বাংলাদেশে : দেবপ্রিয়

বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে দেশের ব্যাংকিং ও রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ খাত এবং স্থানীয় সরকার বিভাগকে সংস্কারের সুপারিশ করেছে স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ তিনটি খাতের সংস্কার ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব হবে না বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৬-২০১৭’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য্য এসব সুপারিশ তুলে ধরেন।

সিপিডির ফেলো বলেন, গত বছর ও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকিং খাতের কোনো পরিবর্তন করতে পারেনি সরকার। বিশেষ করে এ খাতে কুঋণ আরো বেড়েছে। এরমধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোতে কুঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এছাড়া দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যাংকের অলস টাকার পরিমাণ কিন্তু কমেনি। সুতরাং ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা রোধ করতে হলে সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য আলাদা ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে হবে। ৩/৪ মাসের জন্য এ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে এ খাতের সামগ্রিক অবস্থা ও দুর্নীতির চিত্র সরকারকে দেবে। সরকার সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।

তিনি আরো বলেন, অর্থমন্ত্রীও বাজেটে আলাদা ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি কেন এটা করছেন না তা স্পষ্ট নয়।

দেবপ্রিয় বলেন, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগে বড় ধরনের অনিয়ম হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে এক কিলোমিটার রাস্তা বানাতে যে ব্যয় হয় তা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। এত বেশি ব্যয় আর কোনো দেশে হয় না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যয়স্ফীতি সঠিক হারে হচ্ছে কিনা তা এখন দেখা জরুরী হয়ে গেছে। সরকারের উচিত উন্নয়ন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ আনা। প্রতিবছর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কত টাকা ব্যয় করেছে তার হিসাব দেয়। আমি মনে করি ব্যয় হিসাবের সঙ্গে জনগণ কতটুকু সুফল পেয়েছে ও সামগ্রিক কতটুকু ফল এসেছে সে হিসাবও দেওয়া উচিত।

দেবপ্রিয় আরো বলেন, টেকসই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য রফতানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া রফতানিতে তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে অন্যান্য খাত বিশেষ করে চামড়া, সিরামিক ও হিমায়িত খাদ্য পণ্যকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সংস্কার জানিয়ে উদাহরণ স্বরুপ সিপিডি ফেলো বলেন, সরকার হত দরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণের জন্য কর্মসূচিতে নানা অনিয়ম হয়েছে। যাদের কাছে চাল বিতরণ করা হয়েছে প্রত্যেকে গড়ে ১১ কেজি করে চাল পেয়েছেন। সঠিক ব্যক্তি সরকারের এ সহায়তা পেয়েছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

তিনি বলেন, তিন মাসে প্রতিজন হতদরিদ্র ৩০ কেজি করে মোট ৯০ কেজি চাল পাওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে ৭৯ কেজি করে চাল পেয়েছেন তারা। বাকি ১১ কেজি সুবিধাভোগীরা পান নাই। বিতরণ পর্যায়ে আরো স্বচ্ছতার প্রয়োজন আছে। এই সুবিধা দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদেরও দেওয়ার সুপারিশ করেন দেবপ্রিয়।

এসময় ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য্য আরো বলেন, সরকারের মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল আছে বললেও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে বিদ্যূৎ ও গ্যাস পেতে মানুষের ব্যয় অনেক বেড়েছে। এই মূহুর্তে সরকারের তেলের দর কমানো উচিত।

সিপিডি ফেলো বলেন, গত অর্থবছরে অন্যান্য বছরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সফল অর্থনীতিক বছর পার করে। তবে এ বছরে কিছু শক্তিশালী ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি উৎপাদন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে ভাটা দেখা দিয়েছে। এখাত গুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সরকার ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না।



মন্তব্য চালু নেই