রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ালে দ্বৈত শাসনের পরিবেশ তৈরি হবে
সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার প্রয়োজন দেখছেন না বিশেষজ্ঞগণ। তারা বলছে, এতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বেড়ে যাবে। ফলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেন। ফলে দ্বৈত শাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।
অপরদিকে, বিশেষজ্ঞদের এমন অভিব্যক্তির সাথে একমত হতে পারছেনা বিএনপি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের মতে, নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার যে প্রস্তাব দিয়েছে, দেশের মানুষ এখন তাই চায়।
রোববার টিসিবি মিলনায়তনে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন আলোচকরা।
গত বুধবার উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন হওয়া জরুরি। এ লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা উচিত।
সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রশ্নে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার দরকার নেই। রাষ্ট্রপতিকে বেশি ক্ষমতা দেওয়া হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করবেন। এতে দ্বৈত শাসনের পরিবেশ তৈরি হবে।
বরং বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা যায়, সে নিয়ে চিন্তাভাবনা করার পক্ষে মত দেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সংসদ থেকে ৫০ জন নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হলে লাভ হবে না। তাই তিনি নাগরিক সমাজের প্রস্তাবকেই সমর্থন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য সর্বদলীয় সরকার হতে পারে। তবে সে বিষয়ে নাগরিক সমাজ নয়, দলগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও। এ জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা সংবিধানে আছে। সে জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর দরকার নেই। তবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা যেতে পারে।
খন্দকার মোশতাক আহমদ ও জিয়াউর রহমানের কাঁধে ভর করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে হত্যা করেছে বলে মনে করেন আনিসুল হক, রওনক জাহান ও মনজুরুল ইসলাম। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিষয়টি নিছক সামরিক অভ্যুত্থান ছিল না। এর পেছনে দেশের ভেতরের ও বাইরের রাজনৈতিক শক্তি জড়িত ছিল।
অপরদিকে আওয়ামী লীগই ১৫ আগস্টের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতো নোমান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভেতরের শক্তিই ১৫ই আগস্ট তৈরি করেছিল। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল কিছু বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তা। সেই সময় জাসদ বিরোধিতা না করলে ১৫ আগস্টের সৃষ্টি হতো না।
মন্তব্য চালু নেই