রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিয়েছে আ.লীগ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবির মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, তারা এই সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এসেছেন। নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে এই রূপরেখা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রর রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
গত ১১ জানুয়ারি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কথা হয় বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তা বানচালের চেষ্টা করে বিএনপি। তবে গত তিন বছরের নানা ঘটনাপ্রবাহের পর বিএনপি এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে স্পষ্টতই সরে এসেছে। এখন তারা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন এবং তাকে সহায়তা করার জন্য সহায়ক সরকারের কথা বলছে। এই সহায়ক সরকার কেমন হবে সে বিষয়ে শিগগির রূপরেখা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
ওই নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সবগুলোর দলের সদস্যদেরকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। বিএনপিকে স্বরাষ্ট্রসহ তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো মন্ত্রণালয় দেয়ার প্রস্তাবও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে বিএনপি সে প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার কোন মেজর পলিসি বা ডিসিশন নেবে না। এবং কোন মেজর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নেবে না। দৈনন্দিন কাজ করবে নির্বাচনকালীন সরকার।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি দলে থেকেও এ প্রস্তাব আমরা করেছি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে, একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য।’
‘অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে নির্বাচনে আসবে বিএনপি’
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আত্মবিশ্বাসী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপিতেও বুদ্ধিমান রাজনীতিকরা আছেন। তারা নির্বাচনে না আসার ভুল করবে বলে আমার মনে হয় না।’
এমন আত্মবিশ্বাসের কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে কথা বলছি। এদেশকে যতটা চিনি, বিএনপিকে যতটা চিনি। বাস্তবতা থেকে বলছি। বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসবে।’
গত কয়েক মাস ধরে বিএনপি একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। গত সোমবার গঠিত নির্বাচন কমিশনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার বিষয়ে আপত্তি জানালেও বাকিদের বিষয়ে তারা কিছু বলেনি। আবার আপত্তি তুললেও এই কমিশনকে আগের মতো প্রত্যাখ্যান করেনি দলটি।
বিএনপির এমন ‘নমনীয়’ প্রতিক্রিয়াকেই ওবায়দুল কাদের দেখছেন নির্বাচনে অংশ নিতে দলটির আগ্রহ হিসেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো রাজনীতি করি। রাজনীতির কৌশল আছে। বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে ভুল করেছে, সেটার পরিণামে তাদেরকে যতটা দুর্বল, সংকচিত করেছে, এলোমেলো করেছে, ভবিষ্যতে তাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে অপ্রাসাঙ্গিক হয়ে যাওয়ার একটা ঝুঁকি থাকে। সে ঝুঁকি তারা নেবে বলে বিশ্বাস হয় না।’
রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এবার পার্লামেন্টেও নেই, রাজপথেও নেই। নেক্সট টাইম তারা আবার পার্লামেন্টেও থাকবে না, রাজপথেও থাকবে না– এ রকম অবস্থায় তাদের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি ‘মানি না, মানব না’ মানসিকতার মধ্যে রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারা ঢুকেছে। এর মধ্যে থেকে তারা বের হতে পারছে না।’
নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ
একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে বলেও নিশ্চয়তা দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি জাতিকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা একটি অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সব রকমের সহযোগিতা আমরা দেব।’
কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে এই সরকারের আমলেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনও এই মডেলে সবার কাছে সুন্দর, গ্রহণযোগ্য হবে।’
নারায়ণগঞ্জে নগরপ্রধান নির্বাচনে গত ২২ ডিসেম্বরের ভোট ছিল বর্তমান সরকারের আমলের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট। ভোটের দিন বিএনপিও কোনো ধরনের অভিযোগই করেনি। তবে প্রায় ৮০ হাজার ভোটে হেরে যাওয়ার পর নির্বাচনে ‘কিছু একটা’ হয়েছে জাতীয় বক্তব্য দিলেও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এখনও তোলেনি দলটি।
মন্তব্য চালু নেই