রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার যোগ্যতা শুধু জামায়াতের

অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেছেন, ‘পলিটিক্যালি, ফাইন্যান্সিয়ালি, অর্গানাইজেশনালি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার যোগ্যতা কার? শুনবেন? জামায়াতে ইসলামীর।’

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘জামায়াত একাত্তরে নয়টি সেক্টর থেকে হরিলুট করেছিল। পঁচাত্তরপরবর্তী তারা মৌলবাদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। ব্যাংক-বীমা-হাসপাতাল, এমনকি তিন চাকার রিকশা থেকে সাগরের শিপ পর্যন্ত জামায়াতের দখলে। তাদের বাৎসরিক অর্থ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা, যা বাজেটের সমান। ফলে আগামী ৫-১০ কিংবা ১৫ বছর পর দেশে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। তখন সবাই মিলে তা ঠেকানো যাবে না।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জিয়া হলেন একটা কালপ্রিট। সে দেশকে মৌলবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু কেউ এ কথাটি বলে না।’

মুক্তিযুদ্ধে পর জিয়ার ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা দুই রকমের। আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম তাই বলছি। এক ধরনের মুক্তিযোদ্ধা স্বেচ্ছায় যুদ্ধে গেছে, তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা শতভাগ ছিল জেনেই তারা যুদ্ধে গেছে। আরেক ধরনের মুক্তিযোদ্ধা ছিল ঘটনাচক্রে। জিয়াউর রহমান ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ঘটনাচক্রে না হলে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত থাকতেন না। জিয়াউর রহমান কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। না হলে রাজাকারদের কেন পদ দিলেন? আর আপনারা এখন তার স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক করেন। কোনো ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে জিয়া বেতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, এমন বেতার ঘোষক ৬ জন ছিলেন।’

এসময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট বেচাকেনার অভিযোগও আনেন।

বারকাত বলেন, ‘একাত্তরে ৯৩ ভাগ মানুষ গ্রামে ছিল, তাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ গ্রামের মানুষের মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে গ্রামকে ভুলে যাওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয় ৭৫ পরবর্তী সময়ে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র গরিবের সন্তানকে শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেজন্যই প্রতি তিন জনের একজন শিক্ষার্থী মাদরাসায় পড়ে, যারা গরীব।’

‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে ছয়টি শর্ত পূর্ণ করতে হয়। তার সবকিছু একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ছিল। অতএব এসব আজেবাজে বিতর্ক করে সময় নষ্ট করবেন না। ১৬ কোটি মানুষের সময়ের মূল্য অনেক।’

শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রশ্ন উত্থাপনের বিষয়ে বারকাত বলেন, ‘খালেদা না বুঝে বিতর্ক তৈরি করেছেন।’

মুক্তিযুদ্ধের ‘স্বপক্ষের’ শক্তির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, অনেক কিছু বলেন। কিন্তু একাত্তরের অক্টোবরে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের পরীক্ষা দিয়েছে, এসব আমি বের করেছি। ওদের স্বাক্ষরও আছে। সেদিন থেকে আমি তাদের বই পড়ি না। কারণ যারা যুদ্ধই করে না, তারা যুদ্ধের কী বুঝবে?’

সরকার সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজ যদি আপনাদের দলের অসংখ্য নেতাদের বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন, বিশ্ব দর্শন সম্পর্কে বলতে বলি, শিক্ষার্থীরা তো এ প্লাস পায়; আপনারা ৯০ ভাগই ফেল করবেন। তাহলে কী নিয়ে রাজনীতি করেন? জনগণের মঙ্গলের জন্য? আপনাদের দলের অনেক বড় বড় নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করে না। যদি করতেন তবে ভূমিহীন মানুষের থাকার জায়গা হত, গরীব মানুষের জায়গা দখল হত না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতায় যখন থাকবেন আশেপাশে ভালো করে তাকাবেন। আশেপাশে মুশতাক আছে কিনা। আপনারা আওয়ামী লীগ করেন, আমি আওয়ামী লীগের কর্মীও না। তাই আমার বলতে সমস্যা নাই, আপনারা বললে সঙ্গে সঙ্গেই বহিষ্কার হবেন। কথাটি হল- বঙ্গবন্ধুর আশেপাশে একজন মোশতাক ছিল। আর এখন আপনাদের আশেপাশে মুশতাকের সংখ্যা অনেক বেশি। দেখছেন না কী হচ্ছে, না হলে মন্ত্রীসভায় এসব হচ্ছে কেন?

চট্টগ্রামে আবুল বারকাতের বক্তব্যের পরে হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শফির বিবৃতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বক্তৃতা দেয়ার পর যখন এ ধরনের কথা শুনতে হয়; তখন বলবো, দেশে খারাপ সময় চলছে। মনে করিয়েন না এটি ভালো সময়।’

আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।



মন্তব্য চালু নেই