রামপুরায় দুই শিশু হত্যা: একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ৭ জনকে

রামপুরায় দুই শিশু হত্যার তদন্তে তাদের মা-বাবা, খালাসহ ৭ জনকে আটক করেছে র্যাব। এর আগে তাদের গৃহশিক্ষকসহ ৪ জনকে মঙ্গলবার থেকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বুধবার রাতে সবাইকে এক সঙ্গে করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
মা কিংবা বাবা- যে কোন একজনের কারণে শিশু দুটি হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র কাছে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। এদিকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি। সোমবার ইশরাত জাহান অরণী (১৪) এবং তার ছোট ভাই আলভী আমানকে (৬) অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে তার খালা। চিকিৎসকরা তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, বুধবার সকালে জামালপুর শহরের নতুন হাইস্কুল মোড় এলাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই শিশুর বাবা আমান উল্লাহ, মা মাহফুজা মালেক ও খালা আফরোজা মালেককে আটক করে র্যাব। পরে তাদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
সকালে র্যাব-৩-এর কমান্ডিং অফিসার সরোয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের একটি টিম জামালপুর গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ঢাকায় আনা হবে। শিশু দুটির মা-বাবা, খালাকে ঘটনাস্থলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আর মঙ্গলবার থেকেই আটককৃত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ঘটনার পর স্বজনেরা দাবি করেন রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অথচ চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে পেয়েছেন, শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে তাদের বাবা-মা উভয়ই ঘটনা জানেন। যা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এ কারণে তারা দু’জন ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যান। অতীতের কিছু ঘটনার মতো এবারও বাবা কিংবা মা- যে কোন একজনের কারণে দুটি শিশুই হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে।
সূত্র বলছে, শিশুর বাবা আমান উল্লাহর বৈবাহিক, ব্যবসায়ীক কিংবা পারিবারিক বিরোধের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। অন্যদিকে মায়ের পরকীয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ রকম অনৈতিক কোন সম্পর্ক তার থাকলে থাকতেও পারে। আর এসব বিষয় না থাকলে তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামপুরা থানার ওই সূত্রটি আরও জানায়, দুই শিশুর বাসায় তাদের বাবার পরিচিত এক ব্যক্তি আসতেন। তাকেও সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। তার সঙ্গে দু’শিশুর মায়ের সম্পর্ক থাকতে পারে। ঘটনার দিন শিশু দুটি কিছু একটা দেখে ফেলায় তাদেরকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তিনি প্রায় সময়ই এই বাসায় আসতেন এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করতেন বলে প্রতিবেশিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়েছে। তবে ওই ব্যক্তির নাম বা পরিচয় জানা যায়নি। এসব কিছু রাতের বেলায় পরিস্কার হয়ে যাবে। কেননা তাদের ৭ জনকে এক সঙ্গে করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অন্যদিকে প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে শিশু দুটির গৃহ শিক্ষিকা শিউলি আক্তারসহ ৪ জন যেসব তথ্য দিয়েছেন তা নিশ্চিত হতে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেক্ষেত্রে ঘটনার বিস্তারিতও বেড়িয়ে আসবে বলে সূত্রটি আশা করে।
দুই শিশু হত্যার ঘটনা তদন্তের জন্য ওই বাসার দুই নিরাপত্তা প্রহরী পিন্টু দাস ও শাহীন এবং গৃহশিক্ষিকা শিউলি আক্তার ও এক আত্মীয় ফেরদৌসকে মঙ্গলবার আটক করে র্যাব। বুধবার পর্যন্ত তারা র্যাবের কাছেই ছিল।
বুধবার বিকেলে রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। ক্লুও পাওয়া যায়নি। রহস্য উদঘাটনে সম্ভাব্য কারণগুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই এর জট খুলে যাবে। মামলা রাতেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শিশু দুটির পরিবারের কেউ এবং পুলিশ বাদি হয়ে পৃথক মামলা করবে।
প্রসঙ্গত: ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইস্কাটন শাখার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ইশরাত জাহান অরণী (১৪) এবং তার ছোট ভাই হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির ছাত্র আলভী আমানকে (৬) সোমবার সন্ধ্যার পর অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় বলা হয় তারা চাইনিজ খেয়ে ঘুমালে এ ঘটনা ঘটে।
মন্তব্য চালু নেই