রাবিতে ভাস্কর্য উল্টানোর ঘটনায় চিহ্নিত ৭

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভাস্কর্য উল্টানোর ঘটনায় চারুকলার সাত শিক্ষার্থী জড়িত বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা দাবি করেছেন, এরা সবাই স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের নাম পরিচয় জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এদিকে ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান হোসাইন রনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা ৩০-৪০ জন মিলে এই কাজ করেছেন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বাধীন ও ইমরান বলেন, ‘ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের জন্য আমরা উল্টিয়ে রেখেছি। সোমবার রাতে আমরা ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী মিলে এ কাজ করেছি। কিন্তু আমরা কোনও ভাস্কর্য ভেঙে রাখিনি। শুধু কর্তৃপক্ষ যেন উদ্যোগ নেয় সেজন্য এটা করা।’

মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার বলেন, ‘ইউসুফ আলী স্বাধীন নামে এক শিক্ষার্থী আমাদের কাছে স্বীকার করেছে যে, মাস্টার্সের সাত শিক্ষার্থী এ ঘটনায় জড়িত ছিল। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টা জানাবো। কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

ওই শিক্ষার্থীদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের সবার নাম আমি জানতে পারিনি। এদের মধ্যে একজন তো মিডিয়ার সামনে স্বীকার করেছেই (ইমরান হোসাইন রনি)। আর বাকিদের বিষয়ে জানতে পারিনি। আমরা তো তদন্ত করতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটা করবে।’

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত সেরকম কিছু বলা যাচ্ছে না। তারা নাকি নিরাপত্তা, প্রাচীর নির্মাণ, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক উন্নয়ন, অতিরিক্ত পুলিশি চৌকির দাবিতে এগুলো করেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জরাজীর্ণ’ ভাস্কর্যের পরিচর্যা, নিরাপত্তা এবং ভাস্কর্য রাখার জন্য দেয়াল তৈরি করে ঘিরে রাখার দাবিতে ভাস্কর্য উল্টিয়ে প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটায়।

এদিকে মঙ্গলবার ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান হোসাইন রনি সাংবাদিকদের আরও জানান, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমাদের বানানো এই ভাস্কর্যগুলো এখানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু এগুলোর পরিচর্যা করা হয় না। এছাড়া এই চত্বরে একটা প্রাচীর দেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের বলেছি। কিন্তু এখানে কোনও প্রাচীর আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। প্রাচীর না থাকায় বাইরের লোক এসে শিক্ষার্থীদের বানানো এই ভাস্কর্যগুলো ভেঙে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অতীতে।’

তবে শিক্ষকরা এ ঘটনাকে অন্যভাবে দেখছেন। নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘এটা কোনও প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। যে শিল্প নিজ হাতে তৈরি করেছে, সেই শিল্পকে অবমাননা করে দাবি আদায়ের ভাষা খুবই লজ্জাজনক।’

বিভাগের অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘এই ভাস্কর্যগুলোতে আমাদেরও অংশীদার আছে। আর পরিচর্যা বা প্রাচীরের দাবি আমরাও করি, কিন্তু এভাবে কেন প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা অন্যভাবেও এ প্রতিবাদ করতে পারতাম।’
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতির অধ্যাপক মোস্তাফা শরীফ আনোয়ার বলেন, ‘চার-পাঁচজন শিক্ষার্থী এ কাজ করেছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। আমরা এ বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। যেহেতু ভিসি-প্রোভিসি নেই, তাই যে কোনও সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া ঠিক হবে না। তবে আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টা দেখবো।’

রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কাছে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়নি। তারপরও আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



মন্তব্য চালু নেই