বিদায় ১৪২২
রাত পোহালেই নতুন বছর শুরু
বিদায় ১৪২২। অনেক ঘটনা, অনেক স্মৃতি, হাসি-কান্না তথা আনন্দ-বেদনার স্মৃতিবিজড়িত আরও একটি বাংলাবর্ষ কালের গর্ভে হারিয়ে গেল। বছরের শেষ সূর্যাস্ত বিদায় জানালো একটি বছরকে। না-ফেরার এ দিন এখন শুধুই স্মৃতিচারণার। কেউ সুবর্ণ অতীত কিংবা বেদনার বছর মনে করেই হয়তো মানুষের মুখে মুখে রব উঠবে, কিন্তু জাগতিক নিয়ে আর ফিরবে না। রাত পোহালেই আসবে আরেকটি বছর, নতুন বাংলা বছর ১৪২৩ বঙ্গাব্দ।
আবহমানকাল থেকে নানা লোকাচার, উৎসব ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বছরের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তি পালন করে আসছে বাংলাদেশের মানুষ। পূর্ব দিগন্তে নতুন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যাবে নতুন বছর। নানা আয়োজনে ১৪২৩-কে স্বাগত জানানো হবে।
বছরের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তি। এ দিনটি বাংলার লোক-সংস্কৃতির এমন এক অনুষঙ্গ, যা ঐতিহ্যবাহী লোক উৎসবের আমেজে বর্ণিল। হালখাতার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠিখেলা, সঙযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, গান, আবৃত্তি, শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আর ভূত তাড়ানোর মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে চৈত্রসংক্রান্তি।
বাংলার চিরায়ত রীতি অনুযায়ী বছরের শেষ দিনের উৎসবকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। হিন্দু সম্প্রদায়ের চড়ক পূজা চৈত্রসংক্রান্তির এক প্রাচীন ঐতিহ্য। নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতির পাশাপাশি শেষ দিনটিতে থাকে বর্ষ বিদায়ের বিভিন্ন আয়োজন।
এ দিনটিতে পুরান ঢাকায় ভূত তাড়ানো হয়। ওঝা সেজে হাতে ঝাড়ু নিয়ে বিশেষ ভঙ্গিমায় ছোট শিশুরা ভূত তাড়ানোর খেলায় মেতে ওঠে। প্রাকৃতজন জনপ্রজন্ম, বিশ্বকলাকেন্দ্র, সামাজিক সংগঠন ঢাকাবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন এলাকা বের হবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। রং-বেরঙের মুখোশ পরে বিভিন্ন বয়সী মানুষ এ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
চৈত্রসংক্রান্তি প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও অসাম্প্রদায়িক অগ্রসর সমাজের এক বৃহত্তর লোক উৎসব এখন। সাধারণভাবে বাংলা মাসের শেষ দিনে শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পুণ্যের কাজ বলা মনে করা হয়। চৈত্রসংক্রান্তির প্রধান উৎসব ‘চড়ক’। এর সঙ্গে চলে গাজনের মেলা। চৈত্র মাসজুড়ে উপবাস, ভিক্ষান্নভোজন প্রভৃতি নিয়ম পালন করার পর সংক্রান্তির দিন সন্ন্যাসীরা কিংবা সাধারণ লোকের কারও কারও শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শি গাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে (উঁচু করে পোতা কাঠে) ঘোরা, আগুনে হাঁটা প্রভৃতি ভয়ঙ্কর ও কষ্টসাধ্য দৈহিক কলাকৌশল দেখা যায়। অবশ্য এখন এ ধরনের বিপজ্জনক খেলা এখন আরও তেমন দেখা যায় না।
বাংলা বছরের শেষ দিনটিতে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। নকশা করা রঙিন কাগজ-জরি আর ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলেন সাধ্যমতো বর্ণিল করে। লাল শালুতে মোড়া হালখাতাও তৈরি করেন এদিনেই। পরদিন নববর্ষে দিনব্যাপী চলবে হালখাতার উৎসব।
দেশের হিন্দুপ্রধান অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে চৈত্রসংক্রান্তির বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে বারোয়ারি মেলা অন্যতম। বিশেষ করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাভার, দিনাজপুরের ফুলছড়িঘাট ও কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা বসে।
মন্তব্য চালু নেই