রাত পোহাবে কি ‘নিশাচর’ বিএনপির?

সারাদিন কর্মক্লান্তির পর সবাই যখন শীতনিদ্রায়, ঠিক তখন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কাযালয় থেকে ফোন; রাত তখন ১২টা চল্লিশ মিনিট!

দেশে কি যুদ্ধাবস্থা চলছে? নাকি হঠাৎ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে? এত রাতে ফোন কীসের? তেমন কিছুই না, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে!

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে যুবদলের নতুন কমিটি। বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মেইল বার্তা পাঠানো হয়েছে সংবাদ মাধ্যমের অফিস ও বিট রিপোর্টারদের কাছে।

খবরটা যাতে সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়, সেই জন্য মাঘের হাঁড় কাঁপানো মধ্য রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ফোন দেওয়া হয়েছে! এতে সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের বড় উপকার হয়েছে মাইরি!

দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। জনগণের ভোটে বেশ কয়েকবার ক্ষমতায় গেছে। সেই দলের একটি অঙ্গ সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে মধ্য রাতে। সুতরাং সংবাদকর্মীদের উচিত ছিলো অনন্তকালের জন্য জেগে থাকা ওই ‘মহাগুরুত্বপূর্ণ’ নিউজটার জন্য!

তা না করে ‘নির্বোধের’ মতো ঘুমিয়ে পড়েছে সবাই। এদিকে ‘দেশ উদ্ধার’ করা এক কমিটি দিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে বিএনপি। কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদ ঘোষণা করে সংগঠনের মজবুত ভিত রচনায় আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে তারা!

তো বুঝলাম! কিন্তু মধ্য রাতে কেন; সমস্যাটা কী? সমস্যা তো আছেই। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাত ৯টার পর অফিসে এসেছেন। কমিটি গঠন করেছেন। মহাসচিবকে দিয়ে অনুমোদন করিয়েছেন। তারপর মেইল বার্তার মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

পরের দিন দিলে কী হতো? অনেক কিছু হতো। কমিটি ফাঁস হয়ে যেত। নানা জায়গা থেকে নানা রকম তদবির আসত। দলের প্রভাবশালী অংশ ভেটো দিয়ে এ কমিটি আটকে দিতো। এমনকি কমিটি বাতিলও করে দিতে পারতো!

তার মানে খালেদা জিয়ার কমিটি বাতিল করে দেওয়ার মতো শক্তিও আছে বিএনপিতে এবং সেই শক্তির ভয়ে কমিটি গঠনের পর মধ্য রাতেই তা ঘোষণা করতে হয়েছে। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়নি। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কমিটি ঘোষণার প্রয়োজনে একটি দিনের জন্য রাতের অফিস দিনে করতে পারেননি বিএনপির চেয়ারপারসন!

কিন্তু দলটির অতীত ইতিহাসও তো ওই নিশাচরেরই! নাসিক নির্বাচনের ৭ ঘণ্টা আগে রাত ১ টায় দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে ভোটের মাঠ থেকে তুলে নিয়ে আসা, এ যাবতকাল ছাত্রদলের সব কমিটি গভীর রাতে ঘোষণা করা, সর্বচ্চো নীতিনির্ধারণী ফোরামের গুরুত্বপূর্ণ সব বৈঠক রাতের বেলা করা, বিদেশি মেহমানদের সঙ্গে চেয়ারপারসনের রাতের বেলা বৈঠক। সবই তো রাতেই হয়!

‘হেফাজতকাণ্ডে’ মহা সংকটে পড়া জাতির উদ্দেশে ভাষণটিও দিন থাকতে দিতে পারেননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অন্য আর দশটি সাধারণ দিনের মতোই সন্ধ্যার পর অফিসে এসে ঢাকাবাসীর প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে।

কথা তা নয়। যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার নামই রাজনীতি। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সেটা করতেই পারে। কিন্তু বিষয়টা যদি বদাভ্যাসে পরিণত হয়, সেখানেই বাধে গোল! যুবদল, ছাত্রদল, মহিলাদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবকদল বা মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি রাত ১টায় ঘোষণা করার পেছনে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।

প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনীতির মাঠে সমান তালে খেলতে হলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হবে। বিরক্তি উৎপাদন করে সবার কাছে বিরাগভাজন হওয়ার সুযোগ এই মুহূর্তে বিএনপির হাতে নেই। কিন্তু শঙ্কা একটাই, এতসব নসিহতের পরও রাত পোহাবে কি ‘নিশাচর’ বিএনপির?



মন্তব্য চালু নেই