‘রাতেই টাকা ভাগ করে বউ, গাঁজা খাইব ক্যামনে’

মায়ের কাছে চিঠি লিখছি। ওই চিঠি ১৬ দিন পরে মায়ের কাছে গেছে, এরপর ৩২ দিন পর মায়ের চিঠি আসছে। সেই চিঠিতে মা বলছে বাবা ভালো আছি। আর অহনে মোবাইলে জিজ্ঞাস করি মা কেমন আছো, মা বলে বাবা ভালো আছি। কারণ মায়রে একটা ছোট্ট মোবাইল কিন্না দিছি।

প্রযুক্তির এই যুগের সঙ্গে সেকেলের যুগের তুলনা করতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আমিনুর। তিনি পেশায় একজন সিএনজি চালক। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। বর্তমানে থাকেন নারায়ণগঞ্জে। আজ থেকে ৪০ বছর আগে যুবক বয়সেই ঢাকায় আসেন আমিনুর। এরপর থেকে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়েই সংসার চলছে তার। রয়েছে দুই ছেলে। বড় ছেলে অনার্স শেষ করে একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি নিয়েছেন। আর ছোট ছেলে এইচএসসিতে অধ্যায়নরত।

আবার আমিনুর চলে গেলেন প্রযুক্তির গল্পে। বললেন, চাচা শোনেন-আজ থেকে ১৫/১৬ বছর আগে আমি সিএনজি নিয়ে মগবাজার রেলগেট দিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় দেখি- এক লোক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একটা যন্ত্র দিয়া কার সঙ্গে যেন কথা বলছে। কিন্তু ওই যন্ত্রটায় তার-তুর নাই। আমি কই, এইটা কি কইরা সম্ভব। তার ছাড়া কি দিয়া ফোনের মতো কথা বলা যায়। সিএনজিটা সাইড করালাম, এরপর গেলাম ওই লোকটার কাছে। গিয়ে লোকটার কথা বলা দেখলাম দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া। লোকটা কথা বলা শেষ কইরা আমারে জিজ্ঞাস করলো, কি চাচা? আমি কইলাম আপনার এইটায় তার-তুর নাই। কথা কন ক্যামনে?

এরপর ওই লোকটা কইলো, চাচা এটা মোবাইল, এটা দিয়ে কথা বলতে তার লাগে না। একদিন আপনার পকেটেও এটা থাকবে। এ কথা বলতে বলতে আমিনুর তার পকেট থেকে একটা মোবাইল সেট বের করলেন। বললেন সত্যিই এখন আমার পকেটেও এটা আছে। সঙ্গে মুচকি হাসিও দিলেন।

এর পর আলোচনায় চলে এলো অন্য প্রসঙ্গ। আমিনুর বললেন, আমার এক ছেলে চাকরি করে। অন্য ছেলে কলেজে পড়ে। আজকে আমার বড় ছেলে বাসায় আইবো। চাকরি হইছে তিনমাস হয়। এ কারণে আর আসে নাই। আজ আইবো। এজন্য আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় যামু। এতদিন পর ছেলেডা আইবো। কোরবানির মাংস রাখছি ফ্রিজে। পোলাডারে লইয়া খামু। আজকে মনে হইতাছে বাসায় নতুন কেউ আইতাছে-এমন অবস্থা। মন চায় এখনই বাসায় যাই। আসলে সন্তান যে কি জিনিস বুঝবেন না চাচা।

তাহলে তো আপনি অনেক সুখী বলতেই- আমিনুর হ চাচা, আমি খুব সুখী। আল্লায় যেরম রাখছে তাতে অনেক খুশি। আর ছেলেগোরে লইয়াও কোন চিন্তা করতে হয় না। তারা ভালই হইছে। কোন খারাপ কাজের মধ্যে নাই। আর খারাপ হইব কেমনে চাচা। খারাপ হয় অনেক টাকা থাকলে। টাকাই তো নাই, তয় গাজা খাইবো ক্যামনে। টাকা তো প্রতি রাতে ভাগ হইয়া যায়।

আমিনুর বলেন- সারাদিন সিএনজি চালাইয়া যা পাই, তা রাতে গিয়া বউয়ের কাছে দেই। বউ ওই টাকা রাতেই সবাইরে ভাগ কইরা দেয়। পরদিন ছেলের কলেজে যাওয়া খরচ ২০ টাকা, আমার চা-পান খাওনি ২০ টাকা, চাউল-ডাউল ৬০ টাকা… এরকম আরকি। কোন সময়ই তো বাড়তি টাকা পায় না। তাইলে ছেলে খারাপ হইবো ক্যামনে। গাজা খাইবো ক্যামনে, আড্ডা দিব ক্যমনে?



মন্তব্য চালু নেই