রাণীনগরে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগরে চলতি রবিশস্য মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। সরষের ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। আগের তুলনায় বর্তমানে চাষিদের মাঝে সরষে চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিগ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা কিছু হলেও সরষে চাষ করেছেন। এই রবি ফসলটি কম খরচ ও স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় চাষিদের মাঝে সরষে চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এসব গ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন সরষে আর সরষে। সরষে হলুদ ফুলের সমারোহ আর মৌমাছির গুণগুণ শব্দ এলাকা মাতিয়ে তুলছে। সকালের শিশিরভেজা সরষেক্ষেতের অপরূপ দৃশ্য আর তার সুবাসিত মৌ-মৌ গন্ধে পুলকিত করে তোলে সরষে ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীকে। আর কয়েকদির পওেই সরষের দানাভর্তি ছোট ছোট সবুজপত্র ছড়াতে শুরু করবে। তখন সবুজে সবুজে ছেয়ে যাবে ক্ষেতগুলো। এই পত্রগুলো পরিপুষ্ট হয়ে কালচে বরণ ও গাছগুলো মরে যেতে শুরু করলেই সরষে ঘরে তোলার পর্ব শুরু হবে।

চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় এবং সরিষা চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সরিষার পাশাপাশি আলু, গম ও ভোট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এই সরিষা যথা সময়ে ঘরে তুলতে পাড়লে এবং বিক্রয় মূল্য ভাল পেলে সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবছর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। শুরুতেই সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। যথা সময়ে সরকারী পর্যায় থেকে প্রান্তিক কৃষকদের মান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ১ হাজার ২শ’ কৃষকের মাঝে সরিষার বীজ সহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হলেও মাঠ পর্যায়ে বেশ কিছু জমি চাষের উপযুগী না হওয়ায় কিছু কৃষকরা ঠিক সময়ে সরিষা বপণ করতে পাড়েনি। ফলে তারা অন্যান্য রবিশস্য চাষের দিকে ঝুকছেন।
আগামী ইরি-বোরো ধান উৎপাদনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রান্তিক চাষিরা কিছুটা বাধ্য হয়েই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সরিষা, আলু, গম ও ভোট্টা চাষে অতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। উপজেলার পারইল, কাশিমপুর, গোনা ও মিরাট ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের মো: শামছুর রহমান জানান, আমি এবছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে কিছু বীজ পেলেও আমি নিজে বাকিটা কিনে জমিতে বপণ করেছি। সরিষা গাছে প্রচুর পরিমান ফুল ধরায় মনে হচ্ছে এবার সরিষার আশানুরুপ ফলন পাব। দাম ভাল পেলে ইরি-বোরো চাষ করতে পারবো। করজ গ্রামের সরিষা চাষি হবিবর রহমান হবি শাহ জানান, আমি চলতি মৌসুমে প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কোন প্রকার দূর্যোগ ও রোগবালাই না থাকায় এবছর সরিষার বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, এবারে রাণীনগরের ৮টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরিমান সরিষা চাষ হয়েছে। যথা সময়ে জমি চাষ যোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্চার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে রাণীনগর উপজেলায় সরিষা আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। শুধু তাই নয় সরিষা চাষের জমিগুলো উর্ব্বরতা বেশি থাকায় কৃষকরা ইরি-বোরো চাষেও এর সুফল পাবে।



মন্তব্য চালু নেই