বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে

রাণীনগরে বোরো ধানের ফলন কম ও দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষকরা

নওগাঁর রাণীনগরে বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। অতি ঝর-বৃষ্টির কারনে কমে গেছে ধানের ফলন,অতিরিক্ত দামে কেটে নিতে হচ্ছে ধান। বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়ে আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় হাতাশায় পরেছেন কৃষকরা।

বোরো ধান চাষের এলাকা হিসেবে খ্যাত রাণীনগর উপজেলা। এ উপজেলায় এবার চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ৮ টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৭শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় । এর মধ্যে চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৭শ’ ৬৫ হেক্টর যা ধান আকারে ১ লক্ষ ১৫হাজার ১৪৪ মেট্রিকটন নির্ধারন করা হয়। এলাকায় মোটা-চিকন সহ বিভিন্ন জাতের ধান আবাদ হয়ে থাকে। এখানকার ধানের মান ভাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় করতে আসেন।

এবারে প্রথম দিকে ভাল আবহাওয়া, রোগ বালায় কম হওয়ায় বোরা আবাদটা খুব ভাল হয়েছিল। মাঠে ধানগাছ দেখলেই খুশির হাসিতে ভরে উঠতো কৃষকের মূখ। কিন্তু সর্বনাশা কালবৈশাখীর কয়েকদফা ঝর ও বৃষ্টিতে মাত্র ধারণ করা সোনালী রংয়ের ধান মাটিতে পড়ে যায় । ধান আবাদের শেষের দিকে মাটিতে পড়ে যাওয়ায় আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি ধান গাছ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আশানুরুপ ফলন কমে যায়। অন্যদিকে জমিতে বেশি পানি জমে থাকায় পানির নিচে তলে যেতে থাকে ধানের শীষ। ফলে অঞ্চল ভেদে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে দামও ভাল পাওয়া যাচ্ছেনা।

অনেক গরীব কৃষকরা হাঁস-মূরগী ,গরুছাগল বিক্রি করে বা বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে আবার কেউ রিক্সা/ভ্যান চারিয়ে হার ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কেউ জমি বর্গা আবার কেউ বাৎসরিক আকারে লিজ নিয়ে লাভের আশায় ধান চাষ করেছিল। কিন্তু এবার লাভের চাইতে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে লোকসান হবে বলে জানান কৃষকরা। উপজেলার রাজাপুর গ্রামের কৃষক বকুল, ভবানিপুর গ্রামের বাবুল আক্তার, হরিশপুর গ্রামের আহাদ আলীসহ কয়েক জন কৃষক জানান, কালবৈশাখী ঝড়ের কারনে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৪/৫ মন ধান কম হচ্ছে।

পাশাপাশি ধানের নায্যমূল্য না পাওয়ায় আমাদের চরম ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। সরকার যদি মৌসুমীর শুরুতেই কৃষক পর্যায় থেকে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় করতেন তাহলে উপকৃত হওয়া যেত বলে তারা জানান। উপজেলার সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম হিসেবে খ্যাত আবাদপুকুর হাট-বাজারের বিশিষ্ট ধান ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, কৃষকরা প্রতিদিন বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমানে ধান হাটে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছে। জিরা জাতের ধান ৫শ’ ৬০টাকা থেকে মান ভেদে ৫শ’ ৯০টাকা পর্যন্ত আমরা ধান কিনছি। অতি বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকরা ধান গুদাম জাত করতে না পারায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। চাতাল মালিকরা পুরোদমে ধান না কিনায় এবং মাঝে-মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ায় আপাতত ধানের বাজার নিম্ন মুখি রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, কয়েক দফায় কালবৈশাখীর ঝড়ে মাঠ পর্যায়ে পাকা ধান শুয়ে পড়ায় তেমন ক্ষতি না হলেও অতি বৃষ্টিপাতের কারণে নিম্ম অঞ্চলে পানি জমে থাকায় গত বছরের তুলনায় ধান কাটা শ্রমিকের মূল্য দ্বিগুন দিতে হচ্ছে এতে করে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই