রাণীনগরে নীতিমালা উপেক্ষা করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ

নওগাঁর ছোট যমুনা নদী থেকে নীতিমালা উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ড্রেজিং পদ্ধত্তিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছে ইজারাদার ও তার কতিপয় আস্তাভাজন প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা। রাণীনগর উপজেলার নগর বালুর ঠিকি নামক স্থান থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে এলাকার মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ বালু। ট্রাক ও ট্রাক্টর বোঝায় করে বিরতিহীন ভাবে এখান থেকে বালু তুলে বিভিন্ন নির্মান কাজসহ ইটভাটাতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

তাদের খেয়াল খুশি মতো বালু উত্তোলন করায় নদীর তীরবর্তী স্থানীয় কৃষকদের স্বত্ত দখলীয় কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ছে। বাধা দিতে গেলে ওই প্রভাবশালীরা তাদের মারপিটের হুমকীসহ থানা পুলিশের ভয় দেখে বালু উত্তলনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে।

জানাগেছে, নওগাঁ জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা থেকে গত ২৩ এপ্রিল ২০১৫ রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউপির পাশ দিয়ে প্রবাহিত নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর বালুমহল ২২টি শর্ত সাপেক্ষে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য আশরাফ-ই-শিমন নামের এক ব্যাক্তি ৪ লক্ষ ৫১ হাজার ৫০ টাকার বিনিময়ে ইজারা গ্রহন করে। তখন থেকেই সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলন করা শুরু করলে স্থানীয় অপর বালু ব্যবসায়ী নয়ন, জালাল সরদার, ছামছুর গং ও স্থানীয় নদীর তীরবর্তী কৃষকরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ইজারাদারের সাথে গোপন আতাঁত করে নয়ন, জালাল সরদার, ছামছুর গংরা অভিযোকারি অন্য কৃষকদের বাদ দিয়ে পুঃরায় বালু উত্তোলন শুরু করলে কৃষকের নদী সংলগ্ন ফসলি জমি থেকে ব্যাপক হারে বালু উত্তোলন করায় নদীর স্বাভাবিক গতি বৈশিষ্টতা যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি নদীর তীর ভাঙ্গনের গতি ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকাবাসি তাদের প্রতিবাদ করলে ওই ব্যবসায়ীদের হুমকী-ধামকিতে তারা এখন বড় অসহায়। তাদের সম্পত্তি রক্ষার জন্য দ্বীতীয় দফা আবার এলাকাবাসির পক্ষে বাদি হয়ে সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি সহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করে।

এনিয়ে রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে ইজারাদার ও গ্রামবাসির মধ্যে দু’দফা বৈঠক হলেও সঠিক সিদ্ধান্তে না পৌঁছার কারণে নগর গ্রামের কৃষকদের সাথে ইজারাদার গ্র“পের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

যে কোন সময় বালু উত্তোলনকারি ও তার দোসরদের সাথে গ্রামবাসির মারামারির আশংকা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় বালু মহল হতে বালু উত্তোলন কার্যক্রম চলতে থাকলে উত্তর পার্শ্বে থাকা যমুনা নদীর উপর নির্মিত ব্রীজ, পশ্চিম পাশে বিশ্ব রোড এবং পূর্ব পাশে থাকা সড়ক বিভাগের নওগাঁ-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কটি ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হতে পারে বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করেন।

স্থাণীয় কৃষক করিম মেম্বার ,উজ্জল হোসেন, গোলাম মোস্তফা, ফজলুল হক নজরুল ইসলামের দাবি উপজেলার কাশিমপুর মৌজায় নকশায় কোনা নদী ও বালু মহল নাই। যেখানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছে সেটি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, আমাদের জমি সীমানা নির্ধারণ করে দিয়ে যেখানে নদী আছে সেখানে বালু তুললে আমাদের কোন আপত্তি নাই। স্থানীয় প্রশাসন এই কাজ না করায় জটিলতা বাড়ছে। কিন্তু তার পরও ইজারাদার ও তার দোসররা ক্ষমতার দাপট ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর পূর্বক বালু উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে কৃষি জমি, রাস্তা ব্রীজ, নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিচ্ছে।

ইজারাদার আশরাফ ই-শিমনের প্রতিনিধি ঝন্টু জানান, আমরা সরকারি নীতিমালা মোতাবেক ড্রেজার মিশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। বরং গ্রাম বাসিরাই নানা দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে আমাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে।

কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবু জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের শুরুতেই গ্রামবাসি তাদের বাধা দেয়। খবর পেয়ে আমি ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখেছি, যে ভাবে তারা বালু উত্তোলন করছে তাতে করে ওই এলাকার কৃষি জমি রাস্তাঘাট ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এমনকি নদী পথে নৌ চলাচলের পথটিও বন্ধ করে রেখেছে।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিরুল ইসলাম পাটওয়ারি বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে যেহেতু সরকার বালু উত্তোলনের লীজ দিয়েছে সেহেতু ইজারাদার নীতিমালা অনুযায়ী বালু উত্তোলন করবে। এর বাহিরে কিছু করতে গেলে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই