হত্যা মামলা ঠেকাতে লুট মামলা ! নেপথ্যে পুলিশের এক বড় কর্তা

রাজাপুরে কলেজ ছাত্র রুবেল হত্যার বছর পেরিয়ে গেলেও আসামী পালাতক !

ঝালকাঠির রাজাপুরের কলেজ ছাত্র রুবেল হত্যার এক বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার না করে পুলিশ তাদের রক্ষায় অতিউৎসাহি ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই মামলার বছর পেরিয়ে গেলেও প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তার না করে পালাতক দেখিয়ে উল্টো দায়সারা চার্জশীট দিয়ে খুনিদের রক্ষার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অসহায় পরিবারটি জানিয়েছে।

ঘটনার পর থেকে প্রধান খুনী শাহজালালের মামা ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা হওয়ায় মামলা গ্রহন থেকে চার্জশীট প্রদান পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে তিনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগে পাওয়া গেছে। তার নেপথ্য ইশারাতেই রুবেল হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মামলা বাদী, সাক্ষি ও তার রক্তের স্বজনদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রধান আসামীর পিতা ও এজাহারভূক্ত ৫ নম্বর আসামী শাহ আলম বাদি হয়ে কথিত লুটের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।

নিহত রুবেলের পিতা আবুল বাশার মৃধা অভিযোগ করেনে, গত বছরের ২৭ জানুয়ারী তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল ৯টায় প্রতিপক্ষের দায়ের কোপে রুবেল গুরুতর আহত হয় এবং ৩ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৯ জানুয়ারী দুপুরে রুবেল নিহত হয়। হামলার সময় রুবেল কে রক্ষা করতে তার স্কুল পড়–য়া কিশোরী মেয়ে ছুটে গেলে তাকেও কুপিয়ে পঙ্গু করে দেয়। ঘটনার পর রাজাপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুনী শাহজালালের স্ত্রী মুক্তা বেগমকে আটক করে।

এ ব্যাপারে তারা রাজাপুর থানায় ৭ জনকে আসামী করে এজাহার দায়ের করতে গেলে শুরু হয় অদৃশ্য শক্তির তৎপরতা। মামলায় শাহজালাল, স্ত্রী মুক্তা বেগম, আহসান হাবিব আকসু, পুত্র রানা, শাহ আলম মৃধা, জলিল মৃধা ও কহিনুর বেগমের নাম উল্লেখ করে অভিযোগে দিলে রাজাপুর থানার তৎকালিন ওসি ১ ও ২ নং আসামীর নাম বাদ দিয়ে নতুন করে অভিযোগ লিখে আনতে বললে।

নিহত রুবেলের পিতা আবুল বাশার মৃধা আরো জানায়, ১ নং আসামী ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার ভাগ্নে হওয়ায় তার হস্তক্ষেপে বেশ কয়েকদিন গড়িমসির পর রাজাপুর থানায় পুলিশ অভিযোগ রেকর্ড করা হলেও আসামীদের গ্রেপ্তার না করে তাদের রক্ষায় নানাপ্রকার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। সে অনুযায়ী কয়েকমাস পূর্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আরিফ এজাহার নামীয় ১ নম্বর আসামী শাহজালাল কে অভিযুক্ত করে বাকী সকল আসামীকে অব্যবহতি দিয়ে আদালতে চার্জশীট প্রদান করে। চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়ায় প্রধান আসামীর স্ত্রী আটক মুক্তা কারাগার জামিনে বের হয়ে বাদী পরিবারকে সায়েস্তা করতে মরিয়া হয়ে তৎপর চালাতে শুরু করে।

এ অবস্থায় বাদি আবুল বাশার মৃধা চার্জশীটের বিপরীতে নারাজি আবেদন করলে আদালতে শুনানীর জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। কিন্তু মামলার প্রধান হত্যাকারী শাহজালালের পিতা এজাহার নামীয় ৫ নং আসামী মোঃ শাহ আলম বাদি হয়ে নিহত রুবেলের চাচা শুক্কুর মৃধা, মনির হোসেন টুলু মৃধা, এমাদুল হোসেন লাভু মৃধা, চাচাতো ভাই পায়েল মৃধা, চাচী মাহমুদা বেগম, পারুল বেগমকে আসামী করে আদালতে একটি লুটপাটের মামলা (নং-এমপি ১৭৮/১৪) দায়ের করে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৩শ টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ করা হয়।

সরেজমিন স্থানীয়রা জানায়, হত্যা মামলার আসামীরা পলাতক থাকায় রাজাপুর থানার তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলামের উপস্থিতিতে আসামীদের আত্মীয়রা মালামাল ক্ষতিগ্রস্তের আশংকা করলে আত্মীয়দের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেয় হয়। অথচ নিহত রুবেলের বাবা-চাচারা শোকাতুর থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলামাল লুটের এ কাল্পনিক অভিযোগ দায়ের করেছে।

এ অবস্থায় নিহত রুবেলের পিতা আবুল বাশার মৃধা ও তার পরিবারের সদস্যরা সন্তান হত্যার বিচার ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রী সহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের রিকট জোর দাবী জানান।



মন্তব্য চালু নেই