নির্বাচন কমিশন গঠন

রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত নামে বিতর্কের শঙ্কা

রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেয়া ৩১টি রাজনৈতিক দলকে আজ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ৩ টার মধ্যে ৫ জন নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে বলেছে সার্চ কমিটি। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর নাম প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা।

এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, নাম চাইলেও সমস্যা, না চাইলেও সমস্যা। যেহেতু ৩১ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করেছেন, সেহেতু নাম চাওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। আবার নাম না চাইলে রাজনৈতিক দলগুলো সার্চ কমিটিকে নিয়ে নানাভাবে কথা বলবে। এছাড়া যেহেতু গত সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চেয়েছিল, তাই এবারও চাওয়াটা প্রয়োজন মনে করেছে। তিনি বলেন, যত নাম আসবে তত বেশি ভালো। কিন্তু নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাবের পর দলীয় সমর্থক বলে অভিযোগ করা হলে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ৫ জনের যে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি, এই চাওয়াটা ঠিক হয়নি। কারণ, যে দলের পক্ষ থেকে যাদের নাম দেয়া হবে, তাদেরকে সে দলের সমর্থক বলা হবে। যেমন- বিএনপি যে ৫ জনের নাম দেবে তাদেরকে বিএনপির সমর্থক বলা হবে। আবার আওয়ামী লীগ যে ৫ জনের নাম দেবে তাদের আওয়ামী লীগের সমর্থক বলা হবে। এতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যদি সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম দেয়ার পরও বিতর্কিত হবে। আবার বিএনপির লিস্টের কোন ব্যক্তিরই নাম না রাখা হলে এটা আওয়ামী লীগের ইচ্ছা পূরণের নির্বাচন কমিশন হয়েছে বলে অভিযোগ করা হবে। আমি মনে করি সার্চ কমিটি যে ১২ ব্যক্তির নাম বাছাই করেছে তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচন কমিশন গঠর করা যায়। আসিফ নজরুল বলেন, সার্চ কমিটির উচিত হবে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য পাঁচ-ছয়টির বেশি নাম রাষ্ট্রপতির কাছে না পাঠানো। কারণ, বেশি নাম পাঠালে সরকারের পক্ষে তার নিজস্ব পছন্দ বাস্তবায়নের সুযোগ বেশি থাকে। বেশি নাম পাঠালে অহেতুকভাবে বেশি সদস্যের একটি কমিশন গঠন করার অবকাশও থাকে। এ দুটোর কোনটিই কাম্য নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের করা অনুসন্ধান কমিটিতেও তারা নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু সেসব নাম রাখা হয়নি। কমিটি নিজেদের মতো করেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছিল। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। তারা বলেছেন, ৩১ রাজনৈতিক দল প্রত্যেকে ৫ ব্যক্তির নাম দিলে ১৫৫ জন নিরপেক্ষ ব্যক্তি লাগবে। দেশে এতো নিরপেক্ষ ব্যক্তি পাওয়া কঠিন হবে। সত্যিকার অর্থে এসব ব্যক্তি নিরপেক্ষ হলেও নাম প্রস্তাবের পর বিতর্ক সৃষ্টি হবে। কারণ, যে দলের পক্ষ থেকে যার নাম প্রকাশ করা হবে তাকে সে দলের সমর্থক বলে অভিযোগ করা হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আজ বেলা ৩ টার মধ্যে সার্চ কমিটির কাছে ৫ জন করে নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে বলে জানা গেছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট অভিন্ন ৫ জনের নাম প্রস্তাব করবে বলে জানিয়েছে। তবে ১৪ দলীয় জোটের অনেকে নিজ নিজ দলের পক্ষ নাম প্রস্তাব করবে বলে জানা গেছে।

এছাড়া কয়েকটি দল নাম প্রস্তাব না করার পক্ষে মত দিয়েছে। এ দুই জোটের বাইরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অনুসন্ধান কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, তারা কারো নাম প্রস্তাব করবে না। উল্টো তারা এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে বলেছে, এটা রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়। দলগুলো নাম দিলে বিতর্ক বাড়তে পারে। গণফোরামও বলেছে, তাদের পক্ষ থেকে নাম দেয়ার সম্ভাবনা কম। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা আজ বেলা ৩ টার মধ্যে নাম পাঠাব।’

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারও জানিয়েছেন, তারাও যথাযথ সময়ের মধ্যে নাম পাঠাবেন। জাতীয় পার্টির (জেপি) শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, অনুসন্ধান কমিটি যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমরা আশাবাদী। এই প্রক্রিয়ার আমরা অংশ হতে চাই। সুন্দর একটি ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব আছে।



মন্তব্য চালু নেই