ইসি গঠন : ২০ জনের খসড়া তালিকা প্রস্তুত
রাজনৈতিক দলের পছন্দের শীর্ষে বিচারপতি ও আমলা

সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করেছে সাতাশটি রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামের তালিকায় বিচারপতি ও আমলাদের সংখ্যায় বেশি। এরপরই রয়েছে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামের তালিকা পর্যালোচনায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাদের পছন্দের তালিকায় বিচারপতি, আমলা, সেনা ও পুলিশ কর্মকতাদের বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বড় দু’টি দলের সঙ্গে মিল রেখে কিছু ‘কমন’ নাম প্রস্তাব করেছে সার্চ কমিটির কাছে। সেখানেও একই চিত্র। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মোট ১২৫জনের নাম পেয়েছে সার্চ কমিটি। সেখান থেকে মঙ্গলবারের বৈঠকে সার্চ কমিটি ২০ জনের নাম বাছাই করেছে। সার্চ কমিটির বাছাইয়েও সবচেয়ে বেশি বিচারপতি ও আমলা, এরপর সেনা ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে। তবে ২০ জনের নামের ভেতরেও বিচারপতি ও আমলার সংখ্যাই বেশি বলেই সূত্র জানায়।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম মঙ্গলবার জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব করা নামের মধ্যে অনেক মিল পাওয়া গেছে। একাধিক রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কিছু কমন নাম আমরা পেয়েছি।’
বিচারপতি, আমলাসহ সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের নাম প্রস্তাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নাম প্রস্তাব করতে পারত। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘বিচারপতি ও আমলাদের নাম রাজনৈতিক দলগুলো বেশি প্রস্তাব করায় বোঝা যাচ্ছে, বিচারপতি ও আমলারাই তাদের আস্থাভাজন। তাই এ বিষয়ে আমি কোনও কথা বলব না।’
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যারা সরকারি চাকরি করেছেন, তারা যেই পেশাই থাকুন, তারা কোনও না কোনোভাবে সরকারের প্রতি অনুগত থাকবেনই। তাই তাদের নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা হয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক দলের নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পক্ষপাত এড়ানোর জন্যই মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামে বিচারপতি ও আমলাদের নাম এসেছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কাজের পরিধি ও ধরন সম্পর্কে আমলারাই বেশি ওয়াকিবহাল। তাই বিচারপতি, আমলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের কাজের জন্য আমলারাই সহায়ক।
বিচারপতি, আমলার প্রাধান্য নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভা করে সার্চ কমিটিকে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে প্রস্তাব করা নামের মধ্য থেকে বাছাই করে আমরা ৫ জনের নাম প্রস্তাব করেছি সার্চ কমিটির কাছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি না সেখানে কার কার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ অবশ্যই যোগ্যদের নামের তালিকা সার্চ কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। ’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস বলেন, ‘একেবারে পক্ষপাতমূলক যেন না হয়, হয়তো সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিচারপতি ও আমলাদের বেছে নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, কে কার নাম প্রস্তাব করেছে, যদি এমন হয়ে থাকে, সেটা পক্ষপাত এড়ানোর জন্যই হতে পারে।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু প্রস্তাবিত নাম প্রকাশ করিনি, সেহেতু কার সংখ্যা বেশি, এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
মন্তব্য চালু নেই