রাজধানীতে শতাধিক জঙ্গি আস্তানা

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলার নয়ানগর এলাকার একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা। ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যার পরিকল্পনা হয় সেখানেই। গত ২৬ মার্চ রাতে দক্ষিণখানের প্রেমবাগান এলাকার একটি বাড়িতে নিষিদ্ধ জেএমবি সদস্যদের আরেকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধ্যান পায় র‌্যাব। সেখান থেকে শক্তিশালী গ্রেনেড ও বিপুল বিস্ফোরকসহ চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ২৩ মার্চ চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানা এলাকার একটি বাড়ি থেকে আরো এক জেএমবি সদস্যকে গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম, গান পাউডার ও বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চলতি মাসে চট্টগ্রামে আরো একটি বাড়ি থেকে জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমান বিস্ফোরক উদ্ধার হয়।

এভাবে গত এক মাসের মধ্যে বাসা-বাড়িকেন্দ্রিক চারটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। তবে বাস্তব চিত্র হলো, এরকম আরো শতাধিক আস্তানা রয়েছে জঙ্গি সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে।

সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি সদস্যদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব। তবে বেশিরভাগ আস্তানার সঠিক ঠিকানা নেই তাদের কাছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া সাত জঙ্গি সদস্য পুলিশ ও র‌্যাবের রিমান্ডে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ইতোমধ্যে তারা সারাদেশে জঙ্গিদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর তথ্য দিয়েছে। জঙ্গি সদস্যরা সাধারণত চার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে বাড়ি ভাড়া নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২/৩ মাসের মধ্যে বাসা পরিবর্তন করে। স্বামী-স্ত্রী সন্তান সন্ততি ছাড়া অন্য কেউ বাসায় থাকে না বা যাওয়া আসা করে না। বাসস্থান পরিবর্তন করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকার জন্য জঙ্গিদের একাধিক স্ত্রী রয়েছে। স্ত্রীরা সাধারণত ঘরের বাহিরে যাতায়াত করে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক এড়িয়ে চলে।

জঙ্গিরা নিকটাত্মীয়/পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না বা তাদের যাওয়া আসা নজরে পড়ে না। সাধারণ পর্দা দিয়ে সব দরজা জানালা বন্ধ করে রাখে, কখনোই তা সরায় না। ঘরের ভিতরে সাধারণ ১/২টি খাট, একটি টেবিল এবং রান্নার জন্য সামন্য কিছু হাড়ি পাতিল থাকে এবং বাসা পরিবর্তনের সময় এগুলো ভ্যানগাড়িতে বহন করে থাকে।

এছাড়া এরা সাধারণত মসজিদে নামাজ না পড়ে বাসায় পড়ে। বাড়ি ভাড়া করার সময় মালিককে ছোট খাট কর্মস্থলে চাকরি করে বলে জানায়। সাধারণত দুই সেটের বেশি জামা কাপড় মাসে ব্যবহার করে না। বেশিরভাগ সময় কাঁধে ছোট ব্যাগ বহন করে। সাধারণত শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, লোকজন কম সচেতন, মূল সড়ক থেকে অনেক ভেতরে, রাস্তাঘাট ব্যবস্থা সুবিধাজনক নয় এমন স্থানকেই বসবাসের জন্য বেছে নেয় জঙ্গিরা।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকার নিম্নাঞ্চল ও ঢাকার উপকণ্ঠগুলোতে জঙ্গিরা নাম পরিচয় গোপন রেখে আস্তানা গেড়ে থাকছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় বাড়ির মালিকসহ নিজস্ব সহযোগীরা তাদের সহযোগিতা করছে। এরকম তথ্য পেয়ে যাচাই বাছাই চলছে। সঠিক সন্ধান পেলেই অভিযান চালানো হবে।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, জঙ্গিরা বিভক্ত হয়ে পড়েলেও তাদের সংগঠনিক শক্তি বেড়েছে। তাদের কার্যক্রম থেমে নেই। একাধিক বাসা ভাড়া করে তারা গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। র‌্যাব এ ব্যাপারে সজাগ আছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, জঙ্গিরা সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা, উত্তর খান, দক্ষিণ খান, আশুলিয়া, টঙ্গি, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে স্বল্প আয়ের মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে। জেএমবি গ্র“পের ঢাকার দক্ষিণের দায়িত্বে আছে আনোয়ার হোসেন ফারুক, ঢাকা নর্থ ও চট্টগ্রামের দায়িত্বে আছে আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফ ওরফে মারুফ, রাজশাহী রফিকুল ইসলাম ওরফে সাইদ ওরফে রাসেল ওরফে জুবায়ের। এছাড়া খুলনা বিভাগের দায়িত্বে আছে আবীর।

তবে জঙ্গিদের নিরাপদ আবাসস্থল দেশের উল্লেযোগ্য কয়েকটি মাদরাসা। এর অধিকাংশই কওমি। দেশে এ ধরনের মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারের মতো। চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং লালখান বাজার এলাকার দুইটি মাদরাসাকে রীতিমতো জঙ্গিদের দুর্গ বলা চলে।



মন্তব্য চালু নেই