রাজধানীতে প্রতিদিন ভাঙছে ১৫ সংসার
রাজধানীর দুটি সিটি কর্পোরেশেনে প্রতিদিন অস্বাভাবিক হারে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। তালাক দেয়ার দিক থেকে এগিয়ে সবচেয়ে বেশি নারীরা। মোট তালাকের ৬৮ দশমিক ১৯ শতাংশ স্ত্রী এবং ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ স্বামীকে দেয়া হচ্ছে। গত ছয় বছরে দুই সিটিতে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৩০ হাজার ৮৫৫। দৈনিক হিসাবে প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় ১৫ দম্পত্তির মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। দুই সিটির ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত ছয় বছরে দুই সিটিতে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পড়েছে ৩৬ হাজার ৩৭১টি। এর মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৩০ হাজার ৮৫৫টি। স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে তালাকের নোটিশ পড়েছে ২৪ হাজার ৮০৩ এবং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ ১২ হাজার ১৮। এ হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ১৫টি, মাসে ৪২৯টি এবং বছরে পাঁচ হাজার ১৪৩টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।
উত্তর সিটির হিসাব মতে, ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সংস্থাটির পাঁচটি অঞ্চলে মোট ২০ হাজার ৫৮৪টি তালাকের নোটিশ পড়েছে। এর মধ্যে স্বামীর পক্ষ থেকে ৭ হাজার ১৯ এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে ১৩ হাজার ৪৬৫টি। নোটিশ প্রত্যাহার হয়েছে ৪৬৫টি এবং কার্যকর হয়েছে ১৬ হাজার ৬২১টি। ৩ হাজার ৫১৮ নোটিশ চলমান।
অন্যদিকে দক্ষিণ সিটির পাঁচটি অঞ্চলে বিচ্ছেদের নোটিশ পড়েছে ১৫ হাজার ৭৮৭টি। এর মধ্যে স্বামীর পক্ষ থেকে ৪ হাজার ৯৯৯টি, স্ত্রীর পক্ষ থেকে ১০ হাজার ৮০৩টি। নোটিশ প্রত্যাহার হয়েছে ৩৪৮টি এবং কার্যকর হয়েছে ১৪ হাজার ২৩৪টি।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির অঞ্চল-২ এর নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নঈম বলেন, ‘গত ছয় বছরে তার কার্যালয়ে তিন হাজার ২৫৪টি বিচ্ছেদের নোটিশ জমা পড়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ২৭টি স্ত্রীর এবং এক হাজার ২২১টি স্বামীর পক্ষ থেকে। এসব নারীর বেশির ভাগের বয়স ৩০-৩৫ বছর। এক্ষেত্রে উচ্চবৃত্ত ও নিম্নবৃত্তের নারী বেশি। তালাকের ক্ষেত্রে বিবাহের মাত্র এক বছরের মাথায় বিচ্ছেদের ঘটনায় বেশি।
মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিবাহ বিচ্ছেদে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে পরকীয়া অন্যতম।
এছাড়া আধুনিকতার একটা বিষয়ও রয়েছে। তাছাড়া স্বাধীনচেতা নারীর জন্য বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখার অবকাশ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিমের মতে, বেশ কিছু কারণে তালাক প্রবণতা বাড়ছে। তার মতে, প্রথমত নারীর স্বাধীনতা, দ্বিতীয়ত সচেতনা এবং তৃতীয়ত উপার্জন ক্ষমতা বেড়েছে। যে কারণে নারী খুব সহজেই তার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পন্ন নয়। তার মাঝে শূন্যতা বিরাজ করে। সেই শূন্যতা যদি অন্য কারো মাঝে থাকে তখন তার দৃষ্টি প্রসারিত হয়। নারী যদি দেখে সে কারো কাছে গেলে শূন্যতা পূরণ হবে তখন সে তালাকের পথ বেছে নেয়। তাছাড়া দৃষ্টিভঙ্গি, পারিবারিক কলহ, সাংস্কৃতিক, আকাশ সংস্কৃতি, অর্থনীতির কারণেও তালাক প্রবণতা বাড়ছে।
তালাকের ঘটনায় পারিবারিক জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে, যা আগামী প্রজন্মকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলেও মনে করেন এ সমাজবিজ্ঞানী।
অন্যদিকে নারী নেত্রীদের মতে, তারা শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, আত্মমর্যাদা ও নির্ভরশীলতায় এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তাদের সাহসিকতা তৈরি করছে। এজন্য তারা অপমান কিংবা নির্যাতনের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে বিচ্ছেদকে বেচে নিচ্ছেন।
দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, আসলে এটা সামাজিক বিষয়। সামাজিকভাবে নারীরা এখন অনেক এগিয়ে। সেটা কর্মক্ষেত্রে কিংবা মর্যাদার ক্ষেত্রে। নারীরা তাদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। এছাড়া সামাজিক অস্থিরতার কারণেও এমনটা হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই