পহেলা বৈশাখকে বরণ করতে

রাজধানীতে কোটি টাকার ফুল !

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই পহেলা বৈশাখ। পুরানের জীর্ণতা ঝেড়ে নতুনকে স্বাগত জানাবার পালা। এ যেন বাঙালির চিরায়ত উৎসব। এদিন সকালে যেমন পান্তা-ইলিশ না খেলে মনেই হয় না নববর্ষ। ঠিক তেমনই ললনাদের খোঁপায় বাহারী ফুলের ছোঁয়া না লাগলেও যেন সৌন্দর্য্যে পূর্ণতা আসে না। তাই ললনাদের সৌন্দর্য্যকে পূর্ণতা দিতে গত এক সপ্তাহ যাবৎ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক কোটি টাকার ফুল এসেছে জমেছে রাজধানীতে।
রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখে নগরবাসীর ফুলের চাহিদা মেটাতে যশোর, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, সাভার, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট, নারায়নগঞ্জ, ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক কোটি টাকার ফুল এসে জমা হয়েছে রাজধানীতে।
রাজধানীতে আসা ফুলের মধ্যে রয়েছে তরুণ-তরুণীদের প্রিয় গোলাপ, রজনীগন্ধা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, জবাসহ আরো অনেক প্রজাতির ফুল। বিদেশি ফুলের মধ্যে রয়েছে- জারবেরা, কেলনজড়া, গ্ল্যাডিওলাস।
শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোলাপের আঁটি (একশ) বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। প্রতি আঁটি রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫শ’ টাকা। এছাড়া সর্বাধিক ব্যবহৃত গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০টাকা।
পাড়া-মহল্লার দোকানে অবশ্য দামের চিত্র বেশ ভিন্ন। সেখানে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা, গাঁদা ফুলের মালা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ২০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তাছাড়াও প্রতিটি লাল রঙের গ্ল্যাডিওলাস বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকায়। একই সাথে বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের ফুলের তৈরি গয়না সেট। আড়াই শ’ থেকে ৪ শ’ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এসব বাহারী ফুলের চোখ জুড়ানো গয়না।
ফুলের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ী জামান বলেন, ‘বর্তমানে ফুলের ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। গত কয়েক মাস ধরে হরতাল ও রাজনৈতিক নানা কর্মসূচির কারণে অনেক লোকসান গুণেছে ফুল ব্যবসায়ীরা। তাই এখন একটু তো দাম বেশি হবেই।’
এসময় জামানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য এক ফুল ব্যবসায়ী বলেই ফেলেন, ‘সারা বছর নেতারা কামায়। আমরা দু’একবার কামালে সমস্যা কী। আমরাতো সারা বছরই প্রায় লোকসান করি। তাই এখন একটু পুষিয়ে নিচ্ছি।’
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ইমি বলেন, ‘সকালে ফুল লাগবে। তাই আজই কিনে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। তা না হলে কাল ফুলের দাম অনেক বেড়ে যাবে।’ ঘুরে ঘুরে ফুল দেখছিলেন মধ্য বয়সী এক নারী। তার নাম শাহিনা আক্তার। তিনি থাকেন রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায়। কাল মেয়েরা নববর্ষের সাজে সাজবে। তাই মা এসেছেন ফুল কিনতে। কথা হলে তিনি বলেন, ‘উৎসব এলেই ফুল কেনা হয়। এছাড়া অন্য সময় তেমন একটা ফুল-টুল কেনা হয় না। এখন ঘুরে ঘুরে দেখছি আর দাম জানার চেষ্টা করছি। কিন্তু দাম খুবই বেশি। তাই এখনো কিনতে পারিনি। সুবিধামতো পেলেই কিনে ফেলবো।’
এদিকে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশের ১৯টি জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল উৎপাদন হচ্ছে। এসব ফুলের বেশিরভাগই বিক্রি হয় রাজধানীর ক্রেতাদের কাছে। গত বাছরের পহেলা বৈশাখে ফুল বিক্রির টার্গেট ছিল ১০ লাখ টাকা। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও ফুল ব্যবসায়ীদের রয়েছে এমন বড় ধরনের টার্গেট।

 



মন্তব্য চালু নেই