রাখাল বালিকা থেকে ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রী!

আরিফ মাহমুদ: নাজাতের জীবন যেন রূপকথার গল্পের চেয়ে বেশী রোমাঞ্চকর। ১৯৭৭ সালের ৪ অক্টোবর উত্তর মরক্কোর এক পাহাড়ী অঞ্চলে নাজাতের জন্ম। যেখানে মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে মেষপালন। সাত ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় নাজাতের বেড়ে ওঠাও মেষ প্রতিপালন করে। এমনি ভাবেই মরক্কোর এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে স্বাভাবিক নিয়মে কাটছিলো তাঁর শৈশবের জীবন। তারপর, নাজাত স্মরণ করে সেই দিনটি যেদিন তাঁর পরিবার বড়বোন ফাতিহা আর তাকে নিয়ে নতুন জীবনের আশায় ফ্রান্সে চলে আসে। ফ্রান্সে শুরু হলো এক ইমিগ্রান্ট মুসলিম পরিবারের নতুন সংগ্রামমূখর অধ্যায়।

প্রতিটি স্কুলে অসাধারণ সব রেজাল্ট করে মেধাবী নাজাত পার হতে লাগলো সাফল্যের একেকটি ধাপ। ২০০২ সালে সে Institut d’études politiques de Paris থেকে Political Studies এ ডিপার্টমেন্টের সেরা ছাত্রী হিসাবে গ্রাজুয়েশন এবং রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক পদক লাভ করে। তারপর ঐ বছরই Socialist Party তে যোগদান। এরপর ২০০৪ সালে ফ্রান্সের Culture Commission’র চেয়ারম্যান এবং ২০০৫ সালে Socialist Party’র এ্যাডভাইজার হিসাবে যোগদান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৫৮.৫২% ভোট পেয়ে conseillère générale নির্বাচিত।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ১৬ই মে ২০১২ সালে Minister of Women’s Rights হিসাবে মন্ত্রীপরিষদে নাজাতকে নিয়োগ দেন। তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিনটি হলো-২৫ শে আগস্ট ২০১৪ সাল। সেদিন তিনি ফ্রান্সের প্রথম মহিলা শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ পান।

খেয়াঘাটের মাঝির সন্তান, শৈশবের এক পত্রিকার হকার থেকে ভারতের প্রেসিডেন্ট আব্দুল কালাম কিংবা কেনিয়া থেকে ইমিগ্রান্ট হয়ে আসা এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান আর ইন্দোনেশিয়ার মক্তবে শৈশব কাটানো আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আর মরক্কোর রাখাল বালিকা থেকে ফ্রান্সের প্রথম মহিলা শিক্ষামন্ত্রী নাজাত-এদের জীবন কাহিনী যেন রুপকথার গল্পকেও হার মানায়। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, মেধা, পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর যোগ্যতায় মানুষ কিনা করতে পারে। মেঠোপথ থেকে উঠে আসা জীবনজয়ী এসব মানুষের দেখানো আলোর পথ কোটি কোটি স্বপ্নশিকারী তারুণ্যের জন্য অনুপ্রেরণা, শক্তি, সাহস আর দীপ্ত মনোবলের এক অনুপম দৃষ্টান্ত।

লেখক: ছোট গল্পকার, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র



মন্তব্য চালু নেই