আধিপাত্য বিস্তারের জেরেই খুন

রাউজানে ব্রাশ ফায়ারে নিহত যুবলীগ নেতার দাফন সম্পন্ন : থানায় মামলা দায়ের

চট্টগ্রাম রাউজানে সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে নিহত যুবলীগ কর্মী শহিদুল ইসলাম হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার মা ছখিনা বেগম বাদী হয়ে গত বুধবার রাতেই এগারজনকে আসামী করেই এ মামলা দায়ের হয়। রাউজান থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি তবে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শহীদুল ইসলামের লাশ ময়না তদন্ত শেষে রাউজানের হরিশখান পাড়া এলাকার নিয়ে আসা হয়। পরে জানাজার নামাজ শেষে শহীদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। উল্ল্যেখ্য রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের চারবটতল এলাকায় গত বুধবার বিকেলে আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাইক্রোবাস (হাইস) আরোহী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে খুন হয়েছেন শহীদুল আলম নামের বিবদমান গ্র“পের আরেক সদস্য।

নিহত শহীদুল রাউজান ইউনিয়নের হরিশখান পাড়া এলাকার আলী আহমদের পুত্র। থানা পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় জনসাধারনে কাছে জানা যায়, বুধবার বিকেল পৌনে চারটার সময় রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের উত্তর পাশে চারবটতল বাজারের জনৈক জসিম উদ্দিনের গ্রীল ওয়ার্কশপের দোকানে বসে এক চাকমা পরিচিতের সাথে কথা বলছিলেন শহীদুল আলম। তখন তার পরণে ছিল লুঙ্গী ও হাফহাতা গেঞ্জি। এসময় রাউজান সদরের দিক থেকে (পশ্চিম দিক) একটি মাইক্রোবাস (হাইস)-এ করে আসা ৭-৮জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী হঠাৎ বাজারে নামে। তাদের কয়েকজন বাইরে এবং কয়েজন দ্রুত জসিমের গ্রীল ওয়ার্কশপের দোকানে ঢুকে পড়ে। এসময় সন্ত্রাসীরা দোকানের ভেতরে থাকা শহীদুল আলমকে মাথায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে উপর্যপুরি গুলি (ব্রাশ ফায়ার) করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আরো কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে আতংক সৃষ্টি করে। এরপর নিজেদের বহনকারী মাইক্রোবাসে করে রাস্তার পূর্বদিকে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। গুলিতে শহীদুলের মাথার বেশিরভাগ অংশ উড়ে গেছে। এব্যাপারে নিহতের বড় ভাই নুরুল কবির বলেন ‘শহীদুল আলম ওয়ার্কশপের দোকানে বসে একটা লোকের সাথে কথা বলছিল, ঠিক তখন এলাকার ৭-৮জনের চিহ্নিত একটি সন্ত্রাসী গ্র“প প্রকাশ্যে দোকানে ঢুকে গুলি করে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসীদের অনেক এলাকার মানুষ চিনতে পেরেছে।’ কাচা তরকারি বিক্রি করতে আসা প্রত্যক্ষদর্শি আবদুর রাজ্জাক বলেন ‘বাজারে কেনাকেটা করার সময় হঠাৎ একদল সন্ত্রাসী বাজারে নেমে কেউ কেউ দোকানে ঢুকে, কেউ রাস্তার দাঁড়িয়ে গুলি করা শুরু করে। কিছুক্ষণ পর দেখি শহীদুল নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা গুলির শব্দে আতংকিত হয়ে পালিয়ে যাই।’ বাজারের রবিন ফার্মেসির মালিক রবিন বড়–য়া বলেন ‘একদল সন্ত্রাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই একের পর এক গুলি করতে থাকে। এসময় রোগী ও ঔষধ কিনতে আসা সাধারন মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ে। এদিকে ঘটনার পর হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি আ.ফ.ম নিজাম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর সাংবাদিকদের জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে হচ্ছে।’ রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ বলেন ‘নিহত শহীদুল আলমের বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য আইন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা রয়েছে।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে নিহত সন্ত্রাসী শহীদুল গ্র“পের সাথে এলাকার আরেকটি সন্ত্রাসী গ্র“পের দীর্ঘদিন চরম বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের জের ধরেই তাকে প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন করা হয়।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত শহীদুলের ওমানের ভিসা ছিল। সে আসা যাওয়া করতো প্রায় সময়। সর্বশেষ সে আসেন তিনমাস আগে। তার আবির (৮), আদনান (৩) নামের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। নিহতরা ৪ ভাই ৮ বোন। নিহতের মা ছখিনা বেগম ও ববি আকতার কাঁদতে কাঁদতে বলেন ‘এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী শহীদুলকে হত্যা করেছে। আমরা খুনীদের ফাঁসি চাই।’সূত্রে জানাগেছে, শহীদুল দীর্ঘদিন থেকে যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার করতো।



মন্তব্য চালু নেই