রমজানে চাহিদার চেয়ে পণ্যের মজুদ দ্বিগুণ

আসন্ন পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ মজুদ আছে বলে জানিয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পাশাপাশি কোনো কোনো পণ্যের তিনগুণও মজুদ আছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এসব পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর।

টিসিবির আমদানি বিভাগের অতিরিক্ত চার্জ মো. হুমায়ূন কবির জানান, রমজান উপলক্ষে প্রতিবছর আমাদের একটা লক্ষ্য থাকে যে কি পরিমাণ পণ্য প্রয়োজন হবে। সেভাবে আমরা আমদানি করে থাকি। আর এটা করা গত কয়েকবছরের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে। গত কয়েক বছর রমজানে আমাদের যে পরিমাণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য লেগেছে; সে অনুযায়ী আমাদের যোগান থাকে।

তিনি বলেন, এই বছর রমজান মাসকে সামনে রেখে আমাদের দ্বিগুণ পরিমাণ পণ্য মজুদ আছে। কোনো কোনো পণ্য তিনগুণ পর্যন্ত মজুদ আছে। কারণ রমজানের পর আমরা চাইলেই পণ্য আমদানি করতে পারবো না। এর একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। তা ছাড়া রমজানে যদি চাহিদার তুলনায় বেশি প্রয়োজন হয়, তখন মজুদ থেকে মেকাপ দেওয়া যাবে।

তিনি আরো বলেন, রমজান উপলক্ষে টিসিবি ৩ হাজার ৫৪ ডিলারের কাছে পণ্য সরবরাহ করে। আর ডিলাররা এগুলো পৌঁছে দেয় ভোক্তাদের দোর-গোড়ায়।

এ ছাড়া টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে গত ৪ জুন থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় ৫টি পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। পণ্যগুলো হলো- তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর। এসব পণ্য চার কিস্তিতে বিক্রি চলবে ২৫ জুন পর্যন্ত। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী আরো পণ্য বিক্রি করতে পারে টিসিবি।

টিসিবি কেজিপ্রতি মসুর ডাল ১০৩ টাকা, সয়াবিন কেজিপ্রতি ৮৯ টাকা, চিনি ৩৭ টাকা, খেজুর ৮০ টাকা এবং ছোলা ৫৩ টাকা দরে বিক্রি করবে।

এ বছর খোলা বাজারে বিক্রির জন্য ৩ হাজার মেট্রিক টন তেল, দেড় হাজার মেট্রিক টন ছোলা, দেড় হাজার মেট্রিক টন খেজুর ও ২ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল আমদানি করা হয়েছে।

এদিকে টিসিবি জানায়, সারা দেশে ১৭৪টি ট্রাকের মাধ্যমে এ পণ্য বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৫টি, চট্টগ্রামে ১০টি, প্রতি সিটি করপোরেশনে ৫টি এবং জেলা শহরগুলোতে ২টি করে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হবে।

এ ছাড়াও একজন ভোক্তা ট্রাক থেকে ৪ কেজি চিনি, ৫ লিটার সয়াবিন তেল (পেট বোতল), সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল (নেপালি), ৩ কেজি ছোলা এবং ২ কেজি খেজুর কিনতে পারবেন।

প্রতি ট্রাকে চিনি ৪০০-৫০০ কেজি, সয়াবিন তেল ২০০-৪০০ লিটার, মসুর ডাল ১৫০-২০০ কেজি, ছোলা ৩০০-৫০০ কেজি, খেজুর ৫০ কেজি বরাদ্দ থাকবে।
রাজধানীর যেসব স্থানে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক থাকবে: প্রেসক্লাব, সচিবালয় গেট, কাপ্তান বাজার, শাপলা চত্ত্বর (মতিঝিল), ফকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল স্কুল, দৈনিক বাংলা মোড়, শান্তিনগর বাজার, শাজাহানপুর বাজার, বাসাবো বাজার, শেওড়াপাড়া, ছাপড়া মসজিদ ও পলাশী বাজার মিরপুর-১২ নম্বর, খামার বাড়ী, ফার্মগেট, কলমিলতা সুপার মার্কেট (তেজকুনি পাড়া), মহাখালী কাঁচাবাজার, রামপুরা, মালিবাগ বাজার, আগারগাঁও বাজার, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট মিরপুর-১, কচুখেত বাজার, মোহাম্মদপুর টাউনহল ও ঝিগাতলা কাঁচা বাজার, মিরপুর-১০ গোলচত্ত্বর, আব্দুল্লাহপুর বাজার (উত্তরা), গোপীবাগ কমিউনিটি সেন্টার, কালশী বাজার মোড় ও গোলাপশাহ মাজার।

এ ছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ রমজান উপলক্ষে যাতে কোনো ব্যবসায়ী বাজার নিয়ে কারসাজি না করে সে ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে রমজান উপলক্ষে সব ধরনের পণ্য চাহিদার চেয়ে দেড় গুণ বেশি আছে। তা ছাড়া এখন কোনো হরতাল-অবরোধ নাই। ট্রাক ভাড়াও বেশি নয়। তাই দাম বাড়ার কোনো যুক্তিকতা নেই। তবে কোনো ব্যবসায়ী যদি বাজার কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ায় তাহলে তাদের মঙ্গল হবে না। কারণ এতে মানুষের ক্ষতি হবে। শুধু রমজান মাসেই নয় সারা বছর পণ্যের দাম সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

এ সম্পর্কে মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব কাজল বলেন, ‘বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য রয়েছে। আমরা যেকোনো সময় পণ্য আনতে গেলে পাই। তবে আমরা কোনো পণ্য মজুদ করি না। প্রয়োজন অনুযায়ী পাইকারদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে আসি।’

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ৯০ টাকার বেশি যাতে তেল বিক্রি না করি। কিন্তু এই দাম দিয়ে তেল কিনতেই হয়, তাই এ দামে বিক্রি করলে চলবে না। আর চিনি ৩৮ টাকায় বিক্রি করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু চিনি এখনই ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি আমরা ৩৩ টাকা ৮৫ পয়সা দিয়ে পাইকার কিনি। পরিবহণসহ অন্যান্য সব খরচ মিলিয়ে ২ টাকা লাভ করে আমাদের পণ্য বিক্রি করতে হয়। সুতরাং এর কমে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই